দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জনগণনার দিনক্ষণ ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সোমবার জারি করা গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, দুই ধাপে সম্পন্ন হবে দেশের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ, যা ভারতের জনসংখ্যার কেবল সংখ্যা নয়, বরং সামাজিক-অর্থনৈতিক চিত্রের এক বিস্তারিত খসড়া তুলে ধরবে। তবে, এবারের জনগণনা শুধু দীর্ঘায়িতই হবে না, খরচও বাড়বে উল্লেখযোগ্য হারে – প্রায় তেরো হাজার কোটি টাকা।
পর্ব ১ ও ২: হিমালয় থেকে সমতল পর্যন্ত
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, জনগণনার প্রথম ধাপ শুরু হবে ২০২৬ সালের ১ অক্টোবর। এই ধাপে দেশের চারটি পার্বত্য রাজ্য – হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ – সহ অন্যান্য কিছু অঞ্চলে গণনা করা হবে। এরপর, ২০২৭ সালের ১ মার্চ থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ, যেখানে দেশের বাকি রাজ্যগুলিতে জনগণনার কাজ চলবে। অনুমান করা হচ্ছে, এই বিশাল তথ্য সংকলন ও বিশ্লেষণ শেষে ২০২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে জনগণনার চূড়ান্ত তথ্য জনসমক্ষে আসতে পারে।
শুধুই কি সংখ্যা? এবারের জনগণনায় নতুন কী?
এবারের জনগণনায় শুধু লোকসংখ্যা গোনা হবে না, যুক্ত হচ্ছে বেশ কিছু নতুন এবং কৌতূহল উদ্দীপক প্রশ্নমালা, যা দেশের জীবনযাত্রার মান এবং আধুনিকীকরণের এক ঝলক দেবে। নতুন প্রশ্নগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
ইন্টারনেট সংযোগ: বাড়িতে কি ইন্টারনেট সংযোগ আছে?
মোবাইল ফোন ও মালিকানা: একটি বাড়িতে কটি মোবাইল রয়েছে এবং এগুলির মালিক কে?
পানীয় জলের উৎস: বাড়িতে পানীয় জলের উৎস কী?
রান্নার গ্যাসের ধরন: রান্নার জন্য বাড়িতে গ্যাস সংযোগ আছে কি? যদি থাকে তাহলে সেটা কোন ধরনের?
যানবাহনের প্রকার: একটি বাড়িতে কোন ধরনের যানবাহন রয়েছে?
শস্যের ব্যবহার: বাড়িতে সাধারণত কোন ধরনের শস্য ব্যবহার করা হয়?
এই প্রশ্নগুলি দেশের ডিজিটাল বিভাজন, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা এবং আধুনিক জীবনযাত্রার একটি চিত্র তুলে ধরবে।
জাতিগত জনগণনা: রাজনৈতিক চাপ ও বাস্তবতার মিশেল
গত মাসেই কেন্দ্রীয় সরকার জনগণনার সঙ্গে জাত গণনা করার কথা ঘোষণা করেছিল, যা ছিল দেশের রাজনৈতিক মহলে বহুদিনের দাবি। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দীর্ঘদিন ধরে এই জাতিগত জনগণনার দাবিতে সরব ছিল।
জানা গেছে, প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে জাতি এবং জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এবারের জনগণনা পর্বে সংগ্রহ করা হবে। এই অন্তর্ভুক্তি জনগণনার প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘায়িত করবে, কারণ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রশ্ন যোগ করা হচ্ছে সমীক্ষায়। আর এই দীর্ঘসূত্রিতা অনিবার্যভাবেই খরচকেও বাড়িয়ে তুলবে।
এক দশক পর নতুন আদমশুমারি
প্রসঙ্গত, দেশের শেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। প্রতি ১০ বছর অন্তর এই আদমশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও, ২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তা স্থগিত করা হয়েছিল। এক দশক পর, যখন ভারত এক নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন এই নতুন আঙ্গিকের জনগণনা দেশের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।