থযাত্রা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে উঠছে। রাজ্যের নতুন তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় চলছে রথযাত্রার অভূতপূর্ব আয়োজনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে এই উৎসবের আবহে হঠাৎ করেই হোটেল ও টোটোর ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন এবং হোটেল মালিকদের সংগঠন কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
পর্যটকদের অভিযোগ, পুরোনো দিঘা থেকে নিউ দিঘা যাওয়ার টোটো ভাড়া যেখানে আগে ছিল ২০ টাকা, সেখানে এখন মাথাপিছু ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে, সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত সাধারণ হোটেলের নন-এসি রুমের ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০০০ টাকা। এসি রুমের ক্ষেত্রে আগের ১২০০-১৫০০ টাকার ভাড়া এখন ৪০০০-৪৫০০ টাকায় পৌঁছেছে। শুধু হোটেল নয়, রাস্তার পাশের ছোট খাবারের দোকানগুলিতেও দামের বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে, যা পর্যটকদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের অসন্তোষের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের ফেসবুক পেজে কোনো পর্যটক ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে অভিযোগ জানালেই সংশ্লিষ্ট হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে হোটেল মালিকদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে সমাধানের পথ খোঁজা হয়েছে। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি হোটেলেই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙানো বাধ্যতামূলক। সূত্রের খবর, এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছানোর পরই তিনি কড়া বার্তা দেন, যার পরিপ্রেক্ষিতেই এই ভাড়া বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভাড়াবৃদ্ধির বিতর্ক সত্ত্বেও রথযাত্রার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। তিনটি রথ ৭ নম্বর গেট দিয়ে বের হবে এবং পুণ্যার্থীদের জন্য রথের রশি পুরনো মন্দির পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে টানা থাকবে। ইতিমধ্যেই দিঘায় এসে গেছেন প্রায় ৩০ লক্ষ পর্যটক, এবং প্রতিদিন গড়ে আসছেন ১ লক্ষ দর্শনার্থী।
পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। পাশাপাশি, গোটা এলাকাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। মাসির বাড়ির সামনে তৈরি হয়েছে পাথরের চাতাল, ঝাউবনে পাতা হয়েছে ঘাসের গালিচা, এবং তৈরি হয়েছে বিশাল তোরণ। নতুন মন্দির থেকে পুরনো মন্দির পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তার মাঝে মাঝে এলইডি স্ক্রিন বসানো হচ্ছে, যাতে ভক্তরা সহজেই রথযাত্রা উপভোগ করতে পারেন।
ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দিঘার মন্দির ট্রাস্টের সদস্য রাধারামণ দাস জানিয়েছেন, ২৬ জুন সকাল ৭টা থেকে জগন্নাথদেবের দর্শন শুরু হবে। থাকবে নেত্র উৎসব, স্নানযাত্রার পর মন্দির দর্শনের এটিই প্রথম সুযোগ। এই দিন থেকেই শুরু হবে সপ্তাহব্যাপী মেলা ও ভোগ বিতরণ। উল্টোরথের দিন বহু ভক্তকে অন্নভোগ খাওয়ানো হবে। মন্দির চত্বরে বসবে ১০টি দোকান।
এই বছর দিঘার রথযাত্রা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং পর্যটন ব্যবস্থাপনার এক বড় পরীক্ষাও বটে। প্রশাসন ও সংগঠনগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উৎসবটি কতটা নির্বিঘ্নে ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।