ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যাতায়াতের ক্ষেত্রে রেল পরিষেবার উপর আস্থা ক্রমশ কমছে। হাতেগোনা কয়েকটি ট্রেন চললেও, সেগুলির সময়ানুবর্তিতা বলে কিছু নেই। প্রায় প্রতিদিনই এক থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে চলে ট্রেন। লকডাউনের সময় বাতিল হওয়া বহু দূরপাল্লার এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেন আজও চালু হয়নি, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ যাত্রীদের উপর। এই অচলাবস্থার জেরে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা, আর ভরসা বলতে এখন শুধু সরকারি বাস।
ট্রেনের কদর কমছে, বাসের চাহিদা তুঙ্গে
সকাল হলেই অফিস, স্কুল বা অন্যান্য প্রয়োজনে অসংখ্য মানুষ রাস্তায় নামেন। কিন্তু ট্রেনের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন বাস ধরতে। এর ফলে বাসগুলির চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনই যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। এই অতিরিক্ত খরচের বোঝা সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম স্টেশনকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। অমৃত ভারত স্কিম-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ঝাড়গ্রাম স্টেশন, যার লক্ষ্য রেল স্টেশনগুলিকে আরও পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক করে তোলা। এই স্কিমের আওতায় আধুনিক টয়লেট, লিফট, এসকেলেটর, ওয়াই-ফাই, লাউঞ্জ, এমনকি বিজনেস মিটিংয়ের জায়গাও তৈরি হবে।
উন্নয়ন চলছে, দুর্ভোগও বাড়ছে
ঝাড়গ্রাম ছাড়াও দেশের আরও কিছু স্টেশনকে এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এই স্টেশনগুলির নির্মাণ কার্য ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বেশ কিছু ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। লোকাল এবং দূরপাল্লার ট্রেনগুলিও দেরিতে চলায় যাত্রীদের সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছে। চাকুরীজীবী ও পড়ুয়ারাও সময়মতো স্কুল-কলেজ ও অফিসে পৌঁছাতে না পেরে বাসের উপরই নির্ভরশীল হচ্ছেন।
অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ঝাড়গ্রাম থেকে খড়্গপুর ট্রেনে যাতায়াত করেন, আবার অনেকে খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রাম আসেন ট্রেনে। কিন্তু ট্রেনের অনিয়মিত সময়সূচীর কারণে তারা ট্রেনের উপর ভরসা না রেখে বাসেই যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এর ফলে একদিকে যেমন তাদের সময় বাঁচছে, অন্যদিকে যাতায়াতের খরচও বাড়ছে।
সরকারি বাসে ভরসা ও ভবিষ্যতের আশা
বর্তমানে ঝাড়গ্রাম ডিপোতে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা-র বাসের সংখ্যা প্রায় ২২টির কাছাকাছি, যা যাত্রীদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। সাধারণের দাবি, সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছানোই আসল। তাই বাড়ির কাছে স্টেশন থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাসে যেতেই বেশি পছন্দ করছেন।
তবে আশার আলো দেখছেন অনেকে। অমৃত ভারত স্কিমের কাজ সম্পন্ন হলে এবং নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঝাড়গ্রামের সাধারণ মানুষ অনেকটাই উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ততদিন পর্যন্ত অবশ্য বাসের উপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে ঝাড়গ্রামের মানুষকে।