খামেনেই শাসনের খতম চাইছেন খোদ তাঁর ভাইপোই, ‘ইরানে অভ্যুত্থান’ খুব শীঘ্রই?

ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে গত সাতদিন ধরে চলা রুদ্ধশ্বাস সংঘাত যখন মধ্যপ্রাচ্যকে এক ভয়ংকর যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, ঠিক তখনই তেহরানের ক্ষমতার অলিন্দে এক চাঞ্চল্যকর বার্তা দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইয়ের নির্বাসিত ভাইপো মাহমুদ মোরদখানি। ফ্রান্স থেকে এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যুদ্ধের ঘোর বিরোধী, তবে তার মতে, “ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পতনই এই অঞ্চলের প্রকৃত শান্তির পথ।” তার এই মন্তব্য যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

আমেরিকার সম্ভাব্য আক্রমণের জল্পনার মধ্যে, মোরদখানির এই বক্তব্য ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক মহলে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বৈরাচারী শাসনের অবসান জরুরি: মোরদখানি

১৯৮৬ সালে ইরান ছেড়ে আসা মাহমুদ মোরদখানি দীর্ঘকাল ধরেই তার কাকা আয়াতোল্লাহ খামেনেইয়ের স্বৈরাচারী শাসনের কড়া সমালোচক। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এই শাসনব্যবস্থাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কিছু করা প্রয়োজন। যেহেতু আমরা এতদূর এগিয়ে এসেছি, তাই এটা করতেই হবে।” ইজরায়েলের সঙ্গে চলমান সামরিক সংঘর্ষকে তিনি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে না কেউ ঝুঁকি নিচ্ছে, না কেউ ভুল স্বীকার করছে, তা আর টিকিয়ে রাখা যায় না।

মোরদখানি আরও বলেন, “আমি গভীরভাবে দুঃখিত যে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে এসেছে… কিন্তু খামেনেইয়কে হত্যা করলে কি তাৎক্ষণিকভাবে শাসনের অবসান ঘটাবে? এটা ভিন্ন প্রশ্ন।” ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না, তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে “অনেক ইরানি দুর্বল শাসনব্যবস্থা দেখে খুশি।”

তার দৃঢ় বিশ্বাস, “যত তাড়াতাড়ি এর অবসান হবে ততই ভালো। এর অবসান হতে হবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অবসানের মাধ্যমে। অন্যথায় অর্থহীন পরাজয় হবে। আমি এখনও বিশ্বাস করি যে শাসকগোষ্ঠী প্রতিশোধ নেবে।”

ট্রাম্পের হুমকি এবং পারমাণবিক হামলার জল্পনা

এদিকে, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ইরানের কাছ থেকে “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের” দাবি জানানোর পাশাপাশি খামেনেইকে হত্যার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মতে, ট্রাম্প নাকি ব্যক্তিগতভাবে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছেন, যদিও এখনও চূড়ান্ত আদেশ জারি হয়নি।

মোরদখানি দৃঢ়ভাবে বলেন, “ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমাপ্তি এসে গেছে। যা শুরু হয়েছে তা আর বদলানো যাবে না। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, এবং আমরা একসঙ্গে ইতিহাসের এই মোড় অতিক্রম করব। খামেনেই পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। ৪৬ বছর ধরে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে, তা কেবল এই শাসনব্যবস্থার পতনের সঙ্গেই শেষ হবে।”

মধ্যপ্রাচ্যে যখন যুদ্ধের দামামা বাজছে এবং ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের পরিণতি নিয়ে বিশ্ব শঙ্কিত, তখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার আপন ভাইপোর এমন সরাসরি ও বিস্ফোরক মন্তব্য তেহরানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার এই সাহসী বক্তব্য ইরানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাকে কতটা উসকে দেবে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হবে, তা সময়ই বলবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy