কলকাতায় সোনার দামে রেকর্ড উল্লম্ফন, মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস, বিনিয়োগকারীদের উৎসব?

শহর কলকাতায় ফের একবার সোনার দরের পারদ তুঙ্গে। শুক্রবার ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার ১০ গ্রামের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৭,০০০ টাকা, যা আগের দিনের ৯৬,২০০ টাকা থেকে প্রায় ৮০০ টাকা বেশি। এই উল্লম্ফন যেমন সাধারণ ক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে, তেমনই যারা সোনায় বিনিয়োগ করেছেন, তাদের মুখে এনেছে হাসি। বিশ্ববাজারের অস্থিরতার সরাসরি প্রভাব পড়ছে কলকাতার স্বর্ণ বাজারে, যা হলুদ ধাতুর ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে।

কারণ কী এই মূল্যবৃদ্ধির?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনার এই লাগামহীন দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কারণের জটিল সমীকরণ:

বৈশ্বিক অস্থিরতা ও নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা: ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বা বন্ডের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে সোনায় লগ্নি করার প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সোনা ঐতিহ্যগতভাবে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় বৈশ্বিক ঝুঁকির মুখে এর চাহিদা বাড়ছে।

ডলারের দুর্বলতা: মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য কিছুটা কমে যাওয়ায় অন্যান্য মুদ্রার সাপেক্ষে সোনা কেনা তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে, যা সোনার চাহিদা ও দাম বৃদ্ধিতে সহায়ক।

বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন: মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, যেমন চলমান সংঘাত বা আঞ্চলিক অস্থিরতা, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে, যা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতি: মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি বা হ্রাসের জল্পনা সোনার দামে সরাসরি প্রভাব ফেলে। সুদের হার কমলে বা কমার সম্ভাবনা থাকলে সোনায় বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা: বিশ্বের বৃহত্তম দুই সোনার ভোক্তা দেশ হলো চীন ও ভারত। ভারতে আসন্ন পূজা-পার্বণ এবং বিয়ের মরসুমের আগে সোনার চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে, যা স্থানীয় বাজারে দাম বাড়াতে সহায়ক।

সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব:
এই মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের উপর। সামনে বিয়ে, পূজা, অন্নপ্রাশন বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য যারা সোনা কেনার পরিকল্পনা করছিলেন, তাদের বাজেট এখন নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। অনেকে আপাতত বাজার স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু তাতে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কাও থাকছে। ২২ ক্যারাট সোনার দামও ৮৯,০০০ টাকার কাছাকাছি হওয়ায় গয়না তৈরির খরচও অনেকটাই বেড়েছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য সুসংবাদ:
অন্যদিকে, যারা ইতিমধ্যেই সোনায় বিনিয়োগ করেছেন, তাদের জন্য এটি লাভজনক পরিস্থিতি। সোনার বর্তমান বাজারমূল্য তাদের বিনিয়োগের মূল্য অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, যা তাদের আর্থিক পোর্টফোলিওর জন্য ইতিবাচক দিক।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস:
সোনা ব্যবসায়ীদের মতে, আগামী দিনগুলোতেও সোনার দরে অস্থিরতা বজায় থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত, মার্কিন সুদের হারের ওঠানামা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা – এই সবকিছুর সমন্বয়ে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে অথবা কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। তবে, স্বল্পমেয়াদে উচ্চ মূল্য বজায় থাকার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, সোনা এখনও ভারতীয় পরিবারগুলোতে শুধু গয়না নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy