রাজ্য সরকারের জন্য আবারও এক বড় ধাক্কা। ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলের গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। এর ফলে, রাজ্য সরকারের মানবিকতার ভিত্তিতে ঘোষিত এই ভাতা আপাতত বন্ধ থাকবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
কী ছিল রাজ্যের পরিকল্পনা?
গত ৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসি-এর গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ার পর প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি যায়। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিকতার কথা উল্লেখ করে চাকরিহারা গ্রুপ সি কর্মীদের জন্য মাসিক ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন বিচারাধীন থাকলেও, ততদিন পর্যন্ত এই পরিবারগুলোর সংসার চালানোর সুবিধার্থে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভলিহুড অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ইন্টারিম স্কিম, ২০২৫’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। গত ১৪ মে মুখ্যমন্ত্রী এই অনুদান ঘোষণা করেন এবং ১৫ মে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, যেখানে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে এই ভাতা কার্যকর হবে।
আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য:
এদিন হাইকোর্টের রায়ের পর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, “বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্য সরকার যে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-কে ভাতা, অন্তর্বর্তী রিলিফ হিসাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ আপাতত রাজ্য সরকার গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীদের যে ভাতা দিচ্ছিল, তা আর দিতে পারবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “রাজ্যকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। তার ২ সপ্তাহের মধ্যে আমরা অপজিশন হিসাবে উত্তর দেব।”
বেতন ফেরতের বদলে ভাতা প্রদান নিয়ে প্রশ্ন:
ফিরদৌস শামিম রায়ের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলেন, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-তে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সেই কারণেই চিহ্নিত অযোগ্যদের থেকে বেতন ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ পালন না করে বরং উল্টো তাদের ভাতা দিচ্ছিল। অর্থাৎ, টাকা ফেরত না নিয়ে বরং ভাতা হিসাবে টাকা দেওয়া হচ্ছিল।
তাঁর কথায়, হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে এই ভাতা দেওয়ার পক্ষে যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজ্য তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সেই কারণেই আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ভাতা দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত:
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল। এই রায়ের ফলে চাকরিহারা কর্মীদের ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানিতে পুরো বিষয়টি কোন দিকে মোড়ায়, এখন সেটাই দেখার। রাজ্য সরকার কি এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে, নাকি হলফনামায় নতুন কী যুক্তি পেশ করে, সেটাই এখন রাজ্য রাজনৈতিক মহলে এবং চাকরিহারাদের পরিবারে আলোচনার মূল বিষয়।