ওড়িশার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গোপালপুর সমুদ্র সৈকত এবার কলঙ্কিত হলো এক পাশবিক গণধর্ষণের ঘটনায়। রাজা উৎসবের আনন্দ-উৎসবের আবহের মধ্যেই ২০ বছরের এক তরুণীকে তাঁর পুরুষ সঙ্গীর সামনেই গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নৃশংস ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘার পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো, যেখানে একইরকমভাবে এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এই ঘটনায় পর্যটন মহলে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত রবিবার সন্ধ্যায় রাজা উৎসব উপলক্ষে নির্যাতিতা তরুণী তাঁর বন্ধুর সঙ্গে গোপালপুর সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সমুদ্রের নির্জন পরিবেশে একটি স্থানে তাঁরা বসেছিলেন। সেই সময় হঠাৎই তিনটি মোটরবাইকে প্রায় ১০ জন যুবকের একটি দল সেখানে আসে।
অভিযোগ উঠেছে, ওই যুবকরা প্রথমে তরুণী ও তাঁর বন্ধুর ছবি তুলতে শুরু করে। এরপর সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের হুমকি দেয়। আতঙ্কিত হওয়ার আগেই যুবকরা নির্যাতিতার পুরুষ বন্ধুর ওপর হামলা চালায়। নির্মমভাবে তাঁর হাত বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর তরুণীকে টেনে হিঁচড়ে কাছেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, সেখানে অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন তাঁকে গণধর্ষণ করে।
এই পাশবিক ঘটনার পর, নির্যাতিতা তরুণী ও তাঁর বন্ধু কোনওমতে নিজেদের মুক্ত করে গোপালপুর থানায় পৌঁছান এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ নড়েচড়ে বসে এবং দ্রুত তদন্ত শুরু করে। তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং প্রাথমিক তথ্যাদি সংগ্রহ করে।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, আটককৃত সকলেই প্রাপ্তবয়স্ক এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বেরহামপুরের পুলিশ সুপার সরবন বিবেক এম এই বিষয়ে জানান, “এখনও পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে কারও বয়স ১৮ বছরের নিচে নয়। আমরা আরও কিছু অভিযুক্তের সন্ধান করছি। তদন্ত চলছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “নির্যাতিতা তরুণী এবং ধৃতদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। তরুণীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।” বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে পুলিশ জোরদার তল্লাশি চালাচ্ছে।
এই ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা সমুদ্র সৈকতে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে যাওয়া একটি প্রায় একইরকম ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে আনলো। সেসময় পূর্ব মেদিনীপুরের এক তরুণী তাঁর বন্ধুর সঙ্গে দিঘা ঘুরতে গিয়ে হোটেলের ঘর দেখানোর নাম করে একটি অন্ধকার স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সেই সময়ও তাঁর বন্ধুকে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
গোপালপুর সি বিচে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বহু পর্যটক বেড়াতে যান। সমুদ্র সৈকতে এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় পর্যটন মহল রীতিমতো উদ্বিগ্ন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা গোপালপুর কাণ্ডে দ্রুত অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, সমুদ্র সৈকতের নির্জন জায়গাগুলিতে পুলিশের নজরদারি এবং নিরাপত্তা বাড়ানোরও জোরালো দাবি করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পাশবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। পর্যটকদের মনে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।