BLO (বুথ লেভেল অফিসার)-দের উপর ‘অত্যধিক চাপ’-এর কারণে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরই এই ইস্যুতে তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য তাঁর ‘এক্স’ (X) হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিয়ে তাঁকে ‘বিষাক্ত মিথ্যেবাদী’ (Poisonous Liar) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মালব্যের বিস্ফোরক অভিযোগ: অমিত মালব্য দাবি করেছেন, অন্যান্য রাজ্যে SIR প্রক্রিয়া (ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা) একইভাবে চললেও কেবল পশ্চিমবঙ্গেই অস্বাভাবিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তিনি এনডিএ-শাসিত বিহারের উদাহরণ তুলে প্রশ্ন করেছেন:
“বিহারে একই সময়ে একই SIR প্রক্রিয়া হয়েছে, সেখানে কোনও আত্মহত্যা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কেন শুধু বাংলাতেই BLO-দের মৃত্যু হচ্ছে?”
মালব্য আরও বিস্ফোরক অভিযোগ এনে বলেছেন, রাজ্যের সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মীদের ওপর তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের চাপই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষক, অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের বলা হচ্ছে— “দ্রুত তালিকা তৈরি না হলে চাকরি যাবে, বদলি হতে হবে, অথবা শারীরিকভাবে হামলার মুখে পড়তে হবে।”
অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক: মালব্য সরাসরি তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতীতের ‘BLO-দের গাছে বেঁধে রাখা হবে’ মন্তব্যটিকে টেনে এনে প্রশ্ন করেছেন, এই ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরির পরই কেন রাজ্যে BLO-দের মৃত্যু নিয়ে খবর আসতে শুরু করল?
বিরোধীদের দাবি ও তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া:
-
বিরোধীদের অভিযোগ: ২০২১ সালের পর থেকে সরকারি কর্মীদের ওপর হামলা বা চাপে ফেলার ঘটনা বেড়েছে। ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনায় ‘অবৈধ ভোটার ও অনুপ্রবেশকারীদের’ নাম মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় শাসকদলের দুশ্চিন্তা বেড়েছে, আর সেই কারণেই এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
-
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া: শাসকদল এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, “বিরোধী দলগুলি বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। যেকোনো প্রশাসনিক মৃত্যুর তদন্ত আইনি পথেই হবে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি মুনি এক্কার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ, কাজের চাপ বা কোনও তৃতীয় পক্ষের জড়িত থাকার বিষয়—সবই যথাযথভাবে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর রাজ্যের সাধারণ কর্মীদের মানসিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।