দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো জনগণনা প্রক্রিয়া। ১৯৪৮ সালের জনগণনা আইনের অধীনে আজ, ১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক জনগণনা এবং জাতিগণনা সম্পর্কিত সরকারি গেজেটও জারি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই জনগণনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা সক্রিয় হতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে, কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, ফর্ম্যাট প্রস্তুতকরণ এবং মাঠ পর্যায়ের কাজের পরিকল্পনা করা হবে। এটি ভারতের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ দেশে প্রথমবারের মতো জনগণনা এবং জাতিগণনা একসঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সাধারণত ভারতে প্রতি ১০ বছর অন্তর জনগণনা পরিচালিত হয়, যার মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রশাসনিক অনুশীলনগুলির মধ্যে একটি, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং আদমশুমারি কমিশনারের কার্যালয় দ্বারা পরিচালিত। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হতে চলা জনগণনা স্থগিত করা হয়েছিল এবং এখন এটি ২০২৫ সালে শুরু হচ্ছে। এর ফলে, জনগণনার বৃত্তও পরিবর্তিত হয়েছে এবং পরবর্তী জনগণনা ২০৩৫ সালে পরিচালিত হবে।
এবারের জনগণনা প্রক্রিয়া দুটি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপটি ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে, এবং দ্বিতীয় তথা শেষ ধাপটি ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সম্পন্ন হবে। ১ মার্চ, ২০২৭ সালের মধ্যরাতকে রেফারেন্স তারিখ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, অর্থাৎ, সেই সময়ে দেশের জনসংখ্যা এবং সামাজিক অবস্থার পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন, সেই তথ্য রেকর্ড করা হবে। এই দিন থেকে, পরিসংখ্যান জনসমক্ষে আসতে শুরু করবে।
তবে, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ এবং উত্তরাখণ্ডের মতো হিমালয় এবং বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থার রাজ্যগুলিতে, অন্যান্য রাজ্যের আগে ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে। এই অঞ্চলগুলিতে আবহাওয়ার অসুবিধা এবং দুর্গম অঞ্চলের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১ অক্টোবর, ২০২৬ এই রাজ্যগুলির জন্য রেফারেন্স তারিখ হিসেবে বিবেচিত হবে। সম্পূর্ণ জনগণনা প্রক্রিয়াটি প্রায় ২১ মাসের মধ্যে, ১ মার্চ, ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আদমশুমারির প্রাথমিক তথ্য ২০২৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশ করা হতে পারে, যেখানে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।
জনগণনার এই বিশাল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর লোকসভা এবং বিধানসভা আসনের সীমানা নির্ধারণ ২০২৮ সালের মধ্যে শুরু হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে, মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণও বাস্তবায়িত হতে পারে। অর্থাৎ, ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে, যা ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
স্বাধীনতার পর প্রথম জাতি গণনা, রাজনৈতিক গুরুত্ব
এবারের জনগণনা প্রক্রিয়াটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ভারতের স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো আদমশুমারিতে জাতিগণনা করা হবে। এর জন্য, আদমশুমারির প্রশ্নাবলীতে বর্ণের একটি নতুন কলাম তৈরি করা হবে। গত কয়েক বছর ধরে বর্ণ গণনা একটি বড় রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি আরজেডি এবং সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি ক্রমাগত জাতি গণনা পরিচালনার জন্য সরকারের উপর চাপ দিচ্ছিল।
এবারের জনগণনা কাজের জন্য প্রায় ৩৪ লক্ষ গণনাকারী ও তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রায় ১.৩ লক্ষ জনগণনা কর্মকর্তা মোতায়েন করা হবে, যা এক বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এই আদমশুমারি সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হবে, যার জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হবে। জনগণের জন্য স্ব-গণনার ব্যবস্থাও করা হবে, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে। অ্যাপগুলি ১৬টি ভাষায় উপলব্ধ থাকবে।
আজকের বিজ্ঞপ্তি জারির আগে, রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভা করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন এবং ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় কুমার নারায়ণ ছাড়াও আরও অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে বলেছেন, ১৬তম জনগণনায় প্রথমবারের মতো জাতি গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি আরও নিশ্চিত করেছেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ১ অক্টোবর, ২০২৬ থেকে এবং দেশের বাকি অংশে ১ মার্চ, ২০২৭ থেকে বর্ণ গণনা এবং আদমশুমারির কাজ শুরু হবে।
এই জনগণনা শুধু দেশের জনসংখ্যার একটি চিত্রই দেবে না, বরং জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করে সামাজিক নীতি নির্ধারণে এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়নে এক নতুন দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।