পৃথিবীর প্রাচীনতম পর্বতশ্রেণি এবং পুরাণখ্যাত তপোভূমি আরাবল্লী আজ খাদের কিনারায়। মানুষের সীমাহীন লোভ আর নগরায়নের চাপে আড়াইশো কোটি বছরের এই প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ কি আগামী কয়েক দশকে ইতিহাস হয়ে যাবে? এই প্রশ্নই এখন ভাবিয়ে তুলছে পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টকেও। দিল্লির আরাবল্লী অঞ্চলে কেন্দ্রের খনন প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়তেই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিয়েছে শীর্ষ আদালত। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গত ২০ নভেম্বরের নির্দেশ আপাতত কার্যকর হবে না এবং আগামী ২১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে স্থগিতাদেশ থাকবে।
কিন্তু আদালতের এই স্বস্তির মাঝেও গবেষণার রিপোর্ট অত্যন্ত ভয়ংকর। রাজস্থান সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ২০৫৯ সালের মধ্যে আরাবল্লীর ১৬,৩৬০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি বনভূমি জনবসতিতে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ, মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে পাহাড়ের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সবুজ চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯—গত ৪৪ বছরের স্যাটেলাইট ডেটা এবং গুগল আর্থ ইঞ্জিন ব্যবহার করে গবেষক অলোক রাজ ও অধ্যাপক লক্ষ্মীকান্ত শর্মা দেখিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৫,৭৭৩ বর্গকিলোমিটার জঙ্গল হারিয়েছে আরাবল্লী।
পুরাণে যে পাহাড়কে বিন্ধ্য পর্বতের ঔদ্ধত্য রোখার শক্তি হিসেবে দেখা হয়েছে, আধুনিক যুগে সেই পাহাড়ই এখন রিয়েল এস্টেট ও শিল্পাঞ্চলের গ্রাসে। দিল্লি-এনসিআর থেকে উদয়পুর পর্যন্ত পাহাড় কেটে রাস্তা ও শহর গড়ার ফলে প্রাকৃতিক করিডর আজ দ্বিখণ্ডিত। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে ২০৫৯ সালের মধ্যে বনভূমির ২১.৬ শতাংশ সরাসরি বসতিতে রূপান্তরিত হবে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ কি পারবে এই ধ্বংসলীলা রুখতে? উত্তর মিলবে আগামী ২১ জানুয়ারির শুনানিতে।