হুগলির বৈদ্যবাটিতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় চার যুবককে গ্রেফতার করল শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। ছট পুজোর রাতে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার জন্য এক যুবক ইউটিউব দেখে দেশলাই ও বাজি তৈরির মশলা দিয়ে বোমা তৈরি করেছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রেমিকার বাড়ির সামনে সেই বোমা ফাটিয়েই পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে অভিযুক্ত প্রেমিক ও তার তিন বন্ধু।
ঠিক কী ঘটেছিল সেই রাতে?
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৮ অক্টোবর ছটপুজোর মধ্যরাতে বৈদ্যবাটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ড মালির বাগান খামারডাঙা এলাকায় বিকট শব্দে একটি বোমা ছোঁড়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজে বোমাবাজির সেই দৃশ্য ধরা পড়ে। বোমাটি একটি বাড়ির দেওয়ালে লাগে, যার প্রভাবে সেই বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনো সূত্র মেলেনি। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে একটি বাইকের ছবি ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
প্রেমিক-প্রেমিকার বিবাদের জের
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মালির বাগানে যে এলাকায় বোমাবাজি হয়, সেখানে থাকা এক তরুণীর সঙ্গে চাঁপদানীর বাসিন্দা সাগর মালিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন যাবৎ তাদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে সাগর জানতে পারে, তার প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করছে এবং তার ফোনও আর ধরছে না।
‘বোমা ফাটার শব্দে বেরিয়ে আসবে প্রেমিকা!’
সম্পর্ক জোড়া লাগানোর জন্য মরিয়া সাগর তার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে এক অদ্ভুত বুদ্ধি বার করে। পুলিশকে সাগর জানিয়েছে, যখন তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল, তখন গভীর রাত পর্যন্ত তারা ভিডিও কলে কথা বলত। সেই পুরোনো দিনের কথা মনে করেই তার মাথায় আসে, বোমা ফাটার বিকট আওয়াজে যদি প্রেমিকা ভয় পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলেই তার সঙ্গে কথা বলা যাবে!
এই উদ্দেশ্য নিয়েই চার বন্ধু ইউটিউব দেখে বাজির মশলা দিয়ে বোমা বানায়। ছট পুজোর রাতে সেই বোমা হাতেই তারা মালির বাগান এলাকায় পৌঁছায় এবং একটি বাড়ির দেওয়ালে ছুঁড়ে মারে। বোমার শব্দ এতটাই জোর ছিল যে, তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে বাইকে চড়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ওই তরুণীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের কথা জানার পর তার খোঁজ শুরু করে। বাইকের নম্বর এবং মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সাগর ও তার বন্ধুদের খোঁজ মেলে। ঘটনার পর থেকেই তারা বাড়িতে না থেকে নদীয়ার কল্যাণীতে পালিয়ে গিয়েছিল। অবশেষে ব্যারাকপুর থেকে সাগর মালিক, প্রিন্স যাদব, প্রণীত পাল এবং আয়ুস যাদব—এই চার যুবককে (সকলের বয়স ১৮ থেকে ২০-এর মধ্যে) গ্রেফতার করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।
শুক্রবার ধৃত চার অভিযুক্তকেই শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়।