পশ্চিমবঙ্গে এবার দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ ঘিরেও শুরু হয়েছে তুমুল ধর্মীয়-রাজনৈতিক বিতর্ক। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বিস্ফোরক দাবি করেছেন যে, মন্দিরের প্রসাদ তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে এমন তিনটি মিষ্টির দোকানের মালিকই নাকি মুসলিম। যদিও এই সরকারি বিজ্ঞপ্তির সত্যতা Tips24 স্বাধীনভাবে যাচাই করেনি, তবে সুকান্তর এই অভিযোগ লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলেছেন, “হিন্দু ধর্মীয় উৎসবের প্রসাদ তৈরির বরাত মুসলিম ব্যবসায়ীদের দিয়ে আসলে কি মুখ্যমন্ত্রীর চিরাচরিত তোষণনীতিরই প্রতিফলন নয়? যেমন ওবিসি তালিকায় মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তেমনই এবার ঘুরপথে ধর্মীয় বরাতও মুসলিমদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।”
তার অভিযোগের তীর আরও গভীর: “সরকারি কোনো বরাত দেওয়ার আগে সংবেদনশীল ধর্মীয় ইস্যুতে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাসকে গুরুত্ব না দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা গভীর উদ্বেগের।” সুকান্ত মজুমদার প্রশাসনের কাছে এই বিজ্ঞপ্তির সত্যতা যাচাই করে দ্রুত জনগণের সামনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা পেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ইস্যুতে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে দিঘা এলাকার হিন্দু সমাজের একটি অংশের মধ্যে বিষয়টি ঘিরে অসন্তোষ ছড়িয়েছে বলে খবর। প্রশ্ন উঠছে, ধর্মীয় প্রসাদের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে বরাত বন্টনের সময় প্রশাসন কি ধর্মীয় প্রথা এবং জনমানসের ভাবাবেগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে?
উল্লেখ্য, দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরে পুরীর মতো অহিন্দুদের প্রবেশে কোনো বাধা নেই বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। মন্দিরটিকে একটি ‘কালচারাল সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে সব ধর্মের মানুষ প্রবেশ করতে পারবেন বা উৎসবে যোগ দিতে পারবেন বলেও আগে জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রসাদ বিতরণে ‘অহিন্দু’ ব্যবসায়ীদের বরাত দেওয়া নিয়ে এই নতুন বিতর্কের সূত্রপাত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ধরনের ইস্যু লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে পারে। ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে জড়িত এই বিষয়টি প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার, রাজ্য সরকার এই বিতর্কিত অভিযোগের জবাব কত দ্রুত এবং কী প্রক্রিয়ায় দেয়। এই ‘প্রসাদ-রাজনীতি’ আগামী দিনে বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন কৌতূহলের বিষয়।