সুকান্তকে লক্ষ্য করে জুতো-বিক্ষোভ, ব্যাপক উত্তেজনা ও শোরগোল ঘটনায়

সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে ফের একবার উঠে এলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দু’দিন আগেই চটির কাটআউট ছোঁড়ার বিতর্কে ক্ষমা চেয়েছিলেন, আর বৃহস্পতিবার খোদ তাঁর দিকেই উড়ে এল জুতো। বজবজে গিয়ে স্থানীয়দের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সুকান্ত, যা রাজ্যের উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়ার নতুন এক প্রতিচ্ছবি।

ঘটনার সূত্রপাত বজবজে, যেখানে আক্রান্ত এক বিজেপি কর্মীকে দেখতে গিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন স্থানীয়রা। স্লোগান উঠছিল, “চোর! চোর!” আর এরই মধ্যে, সমস্ত রাজনৈতিক শালীনতার সীমা অতিক্রম করে, সুকান্তকে লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। সেই জুতোর লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও, তা যেন ছুঁয়ে গেল রাজ্যের রাজনীতির এক নতুন নিম্নগামী অধ্যায়কে।

এই আকস্মিক আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও পাল্টা সুর চড়ান সুকান্ত মজুমদার। শাসকদলকে নিশানা করে তিনিও স্লোগান তোলেন “চোর!” ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে চাই, এটাকে গণতন্ত্র বলে কিনা? ওনাকে অনুরোধ করব, এই ভিডিওটা একবার দেখে নিতে। যেভাবে গণতন্ত্রকে আজকে রাস্তার মধ্যে নগ্ন করে, যেভাবে তাঁকে ধর্ষণ করা হল, এটাকে গণতন্ত্র বলে না।” এরপর তাঁর ক্ষোভের তীর ধাবিত হয় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে। “এই পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তার ভাইপো এবং জাহাঙ্গির খান,” মন্তব্য করেন সুকান্ত। তাঁর অভিযোগের তালিকা এখানেই শেষ নয়। “এই কাজের জন্য জেহাদিদের নিয়ে আসা হয়েছে। এখানকার লোক নয়। বাংলাদেশের লোক রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এসে এইসব করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাকে পাকিস্তান বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে,” চাঞ্চল্যকর দাবি করেন তিনি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানোর কথাও ঘোষণা করেন সুকান্ত।

অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য এই ঘটনাকে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন। তাঁর যুক্তি, ১০০ দিনের কাজের টাকা না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ থাকা স্বাভাবিক। উল্টে বিজেপির বিরুদ্ধে তিনি ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ আনেন।

প্রসঙ্গত, এই জুতো-কাণ্ড এমন এক সময়ে ঘটল যখন কলকাতা হাইকোর্ট আগামী ১লা অগাস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ শুরু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। বুধবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় এবং অনিয়মের অভিযোগে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা এই প্রকল্প পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এই রায় যেখানে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে, সেখানেই বজবজের এই ঘটনা যেন ফের একবার রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপকেই বাড়িয়ে তুলল। চটির কাটআউট থেকে জুতোর ছোঁড়া – পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে যেন এক বৃত্ত সম্পূর্ণ হল, যার প্রতিটি পর্যায়ে বিতর্কের কাঁটা বিছানো।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy