নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়ার বাড়তি কাজের চাপ এবার উত্তরপ্রদেশেও কেড়ে নিল এক কর্মীর প্রাণ। মোরাদাবাদের বুথ স্তরে SIR-এর কাজে নিযুক্ত ৪৬ বছর বয়সী সহকারী শিক্ষক সর্বেশ সিং মাত্রাতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। মৃত্যুর আগে একটি ভিডিওতে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিজের মানসিক যন্ত্রণার কথা জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সর্বেশ সিং একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং গত ৭ অক্টোবর থেকে তাঁর কাঁধে বুথ স্তরে SIR প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার গুরুদায়িত্ব পড়ে। এটিই ছিল ভোটের কাজে তাঁর প্রথম নিয়োগ। এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা এবং ভোটারদের ফর্ম পূরণে সাহায্য করার ক্ষেত্রে এই বুথ লেভেল অফিসাররাই (BLO) মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তবে এই নতুন কাজই মোরাদাবাদের সর্বেশ সিংয়ের কাছে অতিরিক্ত চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সুইসাইড নোটে চরম হতাশা:
রবিবার ভোরে সর্বেশ সিংয়ের স্ত্রী বাবলি দেবী স্টোর রুমে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাতে লেখা একটি দু’পাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। যেখানে জেলা শিক্ষা আধিকারিককে উদ্দেশ করে সর্বেশ লিখেছেন, সময়মতো তিনি SIR-এর কাজ শেষ করতে পারেননি।
মৃত্যুর আগে শেষ ভিডিওতে কাঁদতে কাঁদতে সর্বেশ সিংকে বলতে শোনা যায়, “এত চাপ নেওয়ার পরও আমি সময়মতো কাজ শেষ করতে পারছি না।” সুইসাইড নোটে তিনি আরও লেখেন:
“আমি দিনরাত পরিশ্রম করেছি। SIR টার্গেট পূরণ করতে পারিনি। আতঙ্কে রাত কাটছিল না আমার। ২-৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমোতেও পারিনি। আমার ৪ মেয়ে রয়েছে। ২ জন অসুস্থ। আমায় ছেড়ে দিন।”
পুলিশ আধিকারিক আশিস প্রতাপ সিং জানান, সুইসাইড নোটে উল্লেখ করা ছিল যে BLO-র ডিউটির সঙ্গে সর্বেশ নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। জেলাশাসক অনু কুমার বলেন, “তদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। ওঁর কাজ করার দক্ষতা অসাধারণ ছিল। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাও ওঁকে সাহায্য করছিলেন। প্রশাসনিক এবং পুলিশ স্তরে তদন্ত চলছে। পরিবারকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
গত কয়েক সপ্তাহে শুধুমাত্র বাংলা নয়, দেশের অনেক রাজ্য থেকেই SIR-এর কাজে নিযুক্ত BLO-দের আত্মহত্যা বা অসুস্থতার খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যেকেরই অভিযোগ, মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁরা নিতে পারছেন না। অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কারও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, আবার কারও ব্রেন স্ট্রোক।
