ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এবার গুরুত্বপূর্ণ মোড়। মেঘালয় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে খুনে ব্যবহৃত একটি ধারালো মাসেটি (বড় ছুরি) উদ্ধার করেছে। অভিযোগ, স্বামীকে খুন করতে সোনম রঘুবংশী তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা এবং তার তিন বন্ধুর সঙ্গে মিলে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করেছিল। বর্তমানে অভিযুক্ত প্রত্যেকেই মেঘালয় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৯ বছর বয়সী রাজা রঘুবংশীকে এই ধারালো অস্ত্র দিয়েই একাধিকবার কোপানো হয়। আক্রমণের সময় রাজা নিজের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ আরও জানিয়েছে, অভিযুক্তরা এই মাসেটি গুয়াহাটি রেলস্টেশনের কাছ থেকে কিনেছিল, যা পরে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি ঘটনাস্থল থেকেই পাওয়া গেছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোনম হানিমুনে যাওয়ার নাটক করে রাজাকে মেঘালয়ে নিয়ে যায়। সেখানেই তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা (২০) এবং তার তিন বন্ধু বিশাল চৌহান, আকাশ রাজপুত ও আনন্দ কুর্মির সঙ্গে মিলে এই খুনের ছক কষে।
প্রথমদিকে পুলিশের সন্দেহ ছিল যে, এই তিন অভিযুক্ত ভাড়াটে খুনি। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে যে, তারা রাজের পুরনো বন্ধু।
রাজা ও সোনমের বিয়ে হয় গত ১১ই মে। এরপর ২১শে মে তারা মেঘালয়ে পৌঁছন। ২৩শে মে থেকে তাদের নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সোহরা এলাকা থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে গত ২রা জুন রাজা রঘুবংশীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। তখনও সোনমের কোনো হদিস ছিল না।
এক সপ্তাহ পর উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে সোনমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার দূরে সে লুকিয়ে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সোনম এই খুনের কথা স্বীকার করে এবং তার প্রেমিক রাজ ও বাকি তিন বন্ধুর নাম ফাঁস করে। বর্তমানে সকল অভিযুক্ত মেঘালয় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, নিহত রাজা রঘুবংশীর দাদা এই হত্যাকাণ্ডে সোনমের বাবা-মায়েরও ভূমিকা থাকতে পারে বলে দাবি করেছেন। তিনি তাঁদের নার্কো-টেস্টের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এই হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে, যার তদন্ত হওয়া উচিত।
এই ঘটনা পারিবারিক কলহ, সম্পর্কের জটিলতা এবং অপরাধ জগতের এক অন্ধকার দিক উন্মোচন করল। তদন্ত যত এগোবে, এই রহস্যের জট ততই খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।