“যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রক্তাক্ত যাত্রীরা”-জানলা দিয়ে ছেলেকে ছুড়ে প্রাণ বাঁচালেন বাবা!

রক্তাক্ত শরীর, কনকনে ঠান্ডা আর চোখের সামনে দাউদাউ করে জ্বলছে সাজানো বাস। দিল্লি-চেন্নাই জাতীয় সড়কের পাশে বসে বরুণ কুমার আর হেমরাজদের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মুখগুলোই বলে দিচ্ছিল কী চরম বিভীষিকা কাটিয়ে ফিরছেন তাঁরা। বেঙ্গালুরু থেকে শিভামোগ্গা যাওয়ার পথে কর্নাটকের হিরিয়ুর গ্রামীণ পুলিশ এলাকায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ঝলসে মৃত্যু হলো ১৭ জন যাত্রীর। গুরুতর আহত আরও ১৫ জন।

ঘটনাটি ঘটে গোরলাথু ক্রসিংয়ে। একটি নিয়ন্ত্রণহীন লরি ডিভাইডার টপকে উল্টো দিকের লেনে ঢুকে সজোরে ধাক্কা মারে যাত্রীবাহী বাসটিতে। গভীর রাতে যাত্রীরা যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। বাসের দরজা জ্যাম হয়ে যাওয়ায় বেরোনোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। এই নারকীয় পরিস্থিতিতে জানলাই হয়ে ওঠে বাঁচার একমাত্র পথ।

স্ত্রী ও আট বছরের ছেলেকে নিয়ে গোকর্ণ যাচ্ছিলেন হেমরাজ। সেই আতঙ্কের মুহূর্ত বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “হঠাৎ মাথায় ভারী কিছু পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। চারদিকে শুধু ধোঁয়া আর আগুন। আমি কোনো রকমে ছেলেকে জানলা দিয়ে বাইরে ঠেলে দিই, তারপর স্ত্রীকে। শেষে আমি নিজে লাফ মারি।” বরাতজোরে যাঁরা জানলা দিয়ে বেরোতে পেরেছেন তাঁরা প্রাণে বাঁচলেও, বাকিরা বাসের ভেতরেই জীবন্ত দগ্ধ হন।

উদ্ধারকাজ নিয়ে অবশ্য প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। আহতদের দাবি, দুর্ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় দেড় ঘণ্টা জাতীয় সড়কের ধারে বসে থাকতে হয়েছে তাঁদের। জরুরি নম্বরে বারবার ফোন করলেও অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছায়নি। আইটি কর্মী বরুণ কুমার বলেন, “সবাই ঠান্ডায় কাঁপছিল আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। কারও হাত ভাঙা, কারও শরীর ঝলসে গিয়েছে।” অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাবি, দুর্ঘটনার জেরে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হওয়ায় তারা সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া মঞ্জুনাথের মতো গুরুতর আহতদের নিয়ে হাসপাতাল যাওয়ার পথেও দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়, যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy