যে আশ্রয়স্থলকে সবচেয়ে নিরাপদ ভাবা হয়, যে সম্পর্কের বাঁধনে সবচেয়ে বেশি নির্ভরতা খোঁজা হয়, সেখানেই যখন বিপদের কালবৈশাখী আসে, তখন সমাজ এক গভীর সঙ্কটের মুখে পড়ে। পূর্ব বর্ধমানের বুলবুলিতলায় এমনই এক মর্মস্পর্শী ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে নিজের বাবার লালসার শিকার হতে হয়েছে এক নাবালিকাকে। বাবা এবং বাবার বন্ধুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গোটা এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে চাঞ্চল্য ও এক গভীর নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন।
রাস্তায় বা কর্মস্থলে নারীদের হেনস্তার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু যখন এক কন্যা তার জন্মদাতা পিতার কাছেই নিরাপদ না থাকে, তখন প্রশ্ন ওঠে, মেয়েদের নিরাপত্তা তাহলে কোথায়? কতটা নিচে নামছে মানবিকতার স্তর, যেখানে একজন বাবা তার নিজের মেয়ের প্রতি এমন পাশবিক আচরণ করতে পারে? এই ভাবনাটুকুও শিউরে ওঠার মতো।
বুলবুলিতলা থানা এলাকার ঘটনা এটি। জানা গেছে, ওই মেয়েটি তাঁর মাসির বাড়িতেই থাকত। তবে মাঝে মধ্যে বাবার বাড়িতেও যাতায়াত ছিল তার। অভিযোগ, গত মার্চ মাসে এই যাতায়াতের সুযোগ নিয়েই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তার বাবা এবং বাবার এক বন্ধু। ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে মেয়েটি পরে তার মাসিকে সব কথা খুলে বলে। মাসি এরপর আর কালক্ষেপ না করে বুলবুলিতলা ফাঁড়ির পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্তরা ফেরার ছিল। প্রায় দু’মাস ধরে তাদের খোঁজ চলছিল। অবশেষে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মহারাষ্ট্র থেকে অভিযুক্ত বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে বুলবুলিতলা ফাঁড়ির পুলিশ। অন্য অভিযুক্ত এখনও পলাতক রয়েছে।
গ্রেফতারের পর বুধবার ধৃত বাবাকে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হয়। আদালত বিচার শেষে ধৃতকে ২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্ত অবশ্য নিজের স্বপক্ষে দাবি করেছেন, স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই বেশ কয়েক বছর ধরে, আর সেই সুযোগ নিয়েই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
কিন্তু এই দাবি, সমাজের চোখে এই ঘটনার ভয়াবহতা এতটুকু কমাতে পারছে না। একজন বাবার বিরুদ্ধে যখন নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, তখন তা কেবল একটি ফৌজদারি অপরাধ থাকে না, তা হয়ে দাঁড়ায় সমাজের প্রতি এক কঠিন প্রশ্নচিহ্ন। কোথায় চলেছে আমাদের মূল্যবোধ, মানবিকতা? নারী সুরক্ষার স্লোগান আর আইন যেখানে ডাহা ফেল, সেখানে এই ঘটনাগুলো বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এক অন্ধকার বাস্তবতা। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং অন্য অভিযুক্তের দ্রুত গ্রেফতারিই পারে কিছুটা হলেও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে এবং মানুষের মনে এই নিরাপত্তাহীনতার ভয় কমাতে।