ভারতের পশ্চিম সীমান্তে শুরু হয়েছে এক বিশাল সামরিক শক্তির প্রদর্শনী—‘ত্রিশূল মহড়া’ (Tri-Services Synergy Enabling Integrated Operations)। ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর এই যৌথ ও সমন্বিত মহড়া শুরু হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তানে। একদিকে যেমন তারা তাদের আকাশসীমা আংশিকভাবে বন্ধ করার জন্য NOTAM (Notice to Airmen) জারি করেছে, অন্যদিকে তেমনি নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন একটাই, ভারতের এই সামরিক শক্তির প্রদর্শনী দেখে কি কার্যত ভীত পাকিস্তান?
কী এই ‘ত্রিশূল’ মহড়া?
‘ত্রিশূল’ বা Tri-Services Synergy Enabling Integrated Operations হল ভারতের তিন সামরিক বাহিনীর সমন্বিত সামরিক অনুশীলন। এর মূলমন্ত্র—‘ত্রিশূলম্ সমন্বয়স্য বালম্’, যার অর্থ হলো ঐক্যের শক্তিই প্রকৃত বল।
এই মহড়ার প্রধান লক্ষ্য হলো—স্থল, সমুদ্র, আকাশ, এবং সাইবার যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা আরও শাণিত করা। অর্থাৎ, যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত ও ঐক্যবদ্ধভাবে শত্রুপক্ষকে মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া।
- শক্তিশালী সামরিক সরঞ্জাম: এই মহড়ায় অত্যাধুনিক টি-৯০ ট্যাঙ্ক, ফ্রান্স থেকে আসা রাফালে যুদ্ধবিমান, বিধ্বংসী ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র, অত্যাধুনিক সাবমেরিন এবং একাধিক যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে।
- অঞ্চল ও সময়: গুজরাট ও রাজস্থান রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চলছে এই অনুশীলন। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা স্যার ক্রিক অঞ্চলে মহড়ার গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর শুরু হওয়া এই মহড়া চলবে ১০ নভেম্বর (সম্ভাব্যত ১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত।
- বলের প্রদর্শন: দক্ষিণ কমান্ডের নেতৃত্বে প্রায় ২০,০০০-এরও বেশি সেনা সদস্য এতে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, “এই অনুশীলন ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা ও সীমান্ত রক্ষার প্রতিশ্রুতি আরও শক্তিশালী করে তুলবে।”
ভারতের শক্তি দেখে পাকিস্তানের জরুরি পদক্ষেপ
ভারতের এই বিশাল সামরিক প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
১. আকাশসীমা বন্ধ (NOTAM): পাকিস্তান ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের মতো NOTAM জারি করেছে। এর ফলে তাদের মধ্য ও দক্ষিণ আকাশসীমায় বিমান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। পাকিস্তান যদিও এটিকে নৌ-মহড়া ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি বলে দাবি করছে।
২. নৌ সতর্কতা জারি: এরপরই পাকিস্তান একই অঞ্চলে ‘নৌ নেভিগেশন সতর্কতা’ (Naval Navigational Warning) জারি করেছে। স্যার ক্রিক থেকে করাচি উপকূল পর্যন্ত এই সতর্কতা জারি হয়েছে, যা ভারতীয় মহড়ার সময়সূচির সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন এক্স (টুইটার)-এ পোস্ট করে জানান, “পাকিস্তান এখন উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, ভারতের ত্রিশূল মহড়া তাদের চোখে দৃশ্যমান শক্তি প্রদর্শন।”
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের পরপর দুবার NOTAM জারি করা এবং নৌসতর্কতা দেওয়া স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তারা ভারতের ‘ত্রিশূল মহড়া’কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বিশেষ করে স্যার ক্রিকের মতো সংবেদনশীল এলাকায় ভারতের এত বড় সামরিক অনুশীলন ইসলামাবাদকে স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ সতর্কতায় রেখেছে। ভারতের এই ঐক্যবদ্ধ সামরিক শক্তির প্রদর্শন সীমান্ত সুরক্ষার বার্তা আরও মজবুত করল।