জীবনের টানাপোড়েনে অর্থের প্রয়োজন হয় না এমন মানুষ বিরল। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই পরিচিত বা বন্ধুদের কাছে হাত পাতেন। কিন্তু প্রাচীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কূটনীতিবিদ ও নীতিশাস্ত্রজ্ঞ আচার্য চাণক্য অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে, ভুল মানুষকে অর্থ ধার দিলে শুধু অর্থহানিই হয় না, বরং জীবনে নানা জটিলতাও বাড়ে। চাণক্য নীতি অনুসারে, কাদের ভুল করেও অর্থ ধার দেওয়া উচিত নয়, চলুন জেনে নিই।
১. খারাপ চরিত্রের মানুষ:
চাণক্য কঠোরভাবে নির্দেশ করেছেন যে, যারা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত এবং প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত, তাদের কাছে অর্থ গচ্ছিত রাখা বা ধার দেওয়া বোকামি। এমনটা করলে শুধু আপনার অর্থই নষ্ট হবে না, বরং আপনি নিজেও আইনি বা সামাজিক জটিলতায় ফেঁসে যেতে পারেন। এই ধরনের মানুষ অর্থের অপব্যবহার করে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. অসন্তুষ্ট ও সর্বদা অসুখী মানুষ:
আচার্য চাণক্য বলেন, যারা সর্বদা অতৃপ্ত এবং জীবনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন, তাদের অর্থ ধার দেওয়া উচিত নয়। কারণ এই ধরনের লোকেরা কখনোই আপনার অর্থের মূল্য দেবে না এবং তাদের কোনো কিছুতেই সন্তুষ্টি আসে না। চাণক্যের মতে, এদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ এদের সংস্পর্শ আপনার মানসিক শান্তি কেড়ে নিতে পারে।
৩. বোকা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ:
মূর্খ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিদের অর্থ দিতে নিষেধ করেছেন চাণক্য। এই ধরনের ব্যক্তিরা সঠিক-ভুলের পার্থক্য করতে অক্ষম এবং আপনার অর্থকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। চাণক্যের মতে, একজন মূর্খ ব্যক্তি কারো পরামর্শ শোনে না এবং নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করে। তাদের সাহায্য করা অর্থহীন তো বটেই, বরং আপনার জন্য নতুন সমস্যার কারণও হতে পারে।
৪. মাদকাসক্ত মানুষ:
চাণক্য নীতিতে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অর্থ ধার দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই ধরনের ব্যক্তিরা মাদকের জন্য যেকোনো সীমা অতিক্রম করতে পারে এবং অর্থের চরম অপব্যবহার করে। মাদকাসক্তরা প্রায়শই সঠিক ও ভুল বিচারের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আচার্য চাণক্যের মতে, এদের অর্থ দেওয়া মানে জলে ফেলা, কারণ তারা শুধু তাদের আসক্তি মেটাতেই এটি ব্যবহার করবে।
৫. যারা তাদের সম্পদ নিয়ে গর্ব করে:
চাণক্য আরও বলেন, যারা নিজেদের সম্পদ নিয়ে অহংকার করে, তাদের টাকা দেওয়া উচিত নয়। এই ধরনের মানুষ অর্থের সঠিক মর্যাদা বোঝে না এবং বেহিসেবিভাবে ব্যয় করে। চাণক্যের মতে, যারা তাদের সম্পদের উপর গর্ব করে, তারা দ্রুতই দারিদ্র্যের শিকার হয়। এমন অহংকারী ব্যক্তিদের সাহায্য করা আপনার অর্থ, সময় এবং শক্তির অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
চাণক্যের এই নীতিগুলি মেনে চললে একদিকে যেমন আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়, তেমনই অন্যদিকে অবাঞ্ছিত ঝামেলা থেকেও মুক্ত থাকা যায়। এই উপদেশগুলি বর্তমান সমাজেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
