দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরতে চলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর এই খবর সামনে আসতেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ২০২৫ সালের রমজানের আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে একযোগে এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের আভাস দিচ্ছে।
গুলশান-২ এর এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর ডুপ্লেক্স বাড়িতে তারেক রহমানের থাকার সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বাড়িটি পূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মালিকানাধীন ছিল, যা সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে হস্তান্তরিত হয়েছে। একসময় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করলেও, গত ছয় মাস আগে তারা এই বাড়িটি ছেড়ে দেয়। এরপর থেকেই তারেক রহমানের জন্য এই বাড়িটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দেড় মাসের মধ্যেই তারেক রহমান লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত এবং তিনি নিজেও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী। লন্ডন সফর শেষে সদ্য বাংলাদেশে ফেরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, “তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি যখন ইচ্ছে, তখনই দেশে ফিরতে পারেন।”
এর আগে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার গত ১১ই জুন এক ফেসবুক পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, “তিনি লন্ডন থেকে ফিরছেন ২৬শে জুলাইয়ের আগেই।” এরপর বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তারেক রহমান ৫ই আগস্টের মধ্যেই বাংলাদেশে ফিরবেন। দিন চূড়ান্ত না হলেও এই তারিখের মধ্যেই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। বিশেষ করে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার আগেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “তাঁর (তারেক রহমান) তো দেশে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, যে কোনো সময় ইচ্ছা করলেই দেশে ফিরতে পারেন।”
উল্লেখ্য, এই বাড়িটি ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয়েছিল। এটি গুলশানে তার বর্তমান বাসভবন ‘ফিরোজা’-এর পাশেই অবস্থিত। প্রসঙ্গত, পূর্বে ঢাকা সেনানিবাসের ভেতর খালেদা জিয়াকে দেওয়া আরেকটি বাড়ি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বরাদ্দ বাতিল করে তাকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এবং তার তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এরই মধ্যে তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও লন্ডনে ফেরার আগে বাড়িটি ঘুরে দেখে গেছেন। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, সেদিকেই এখন সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ।