বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংসতার কালো ছায়া যেন সরছেই না। দীপু দাস এবং সম্রাটের মর্মান্তিক পরিণতির পর এবার ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবককে প্রাণ দিতে হলো। নিহতের নাম বজেন্দ্র বিশ্বাস (৪২)। চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, গত ১৮ ডিসেম্বর যে ভালুকা এলাকায় দীপু দাসকে পিটিয়ে গাছে ঝুলিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, সেই একই এলাকায় এবার প্রাণ হারালেন বজেন্দ্র।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ‘সুলতানা সোয়েটার্স লিমিটেড’ নামে একটি পোশাক কারখানায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বজেন্দ্র এবং অভিযুক্ত যুবক নমন মিঁয়া (২৯)—দুজনেই ওই কারখানায় নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ ডিউটি চলাকালীন এই রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, নমন মিঁয়া হঠাতই তাঁর হাতে থাকা বন্দুকটি বজেন্দ্রর দিকে তাক করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, নমন নাকি মজা করে বন্দুকটি তাক করেছিলেন, কিন্তু হঠাতই ট্রিগার চেপে যাওয়ায় গুলি ছিটকে এসে বজেন্দ্রর উরুর ওপরের অংশে লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ভালুকা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি) মহম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযুক্ত নমন মিঁয়াকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঘটনার ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এই সংবেদনশীল ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে এই মৃত্যুকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ স্থানীয়দের একাংশ। কারণ, কয়েক দিন আগেই এই ভালুকাতেই দীপু চন্দ্র দাসকে যেভাবে ‘জঙ্গি জনতা’ উল্টো করে ঝুলিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিল, সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। পর পর হিন্দু যুবকদের টার্গেট করায় ওপার বাংলার হিন্দু সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।