আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার AI 171 বিমান দুর্ঘটনার পর কেটে গেছে বেশ ক’দিন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রী সহ প্রায় ২৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। কিন্তু এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে এবার চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন তুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দুর্ঘটনর নেপথ্যে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ কোনও অভিসন্ধির ইঙ্গিত দিয়ে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটা ইন্সিডেন্ট হতে পারে, অ্যাক্সিডেন্ট হতে পরে। আমি সেটার বিরোধিতা করছি না। তবে, যদি পূর্ব পরিকল্পিত কোনও ইন্সিডেন্ট বা অ্যাক্সিডেন্ট হয় তাহলে সেটাকে নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। যে অ্যাক্সিডেন্ট আমদাবাদ-লন্ডনের বিমানে হয়েছে। তদন্ত করাচ্ছেন কাদের দিয়ে? আমলাদের দিয়ে!” তাঁর প্রশ্ন, যখন তিনি রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন রেল দুর্ঘটনা ঘটলে রেলওয়ে সেফটি রিভিউ কমিটি তদন্ত করত। সিভিল এভিয়েশনেও নিশ্চয়ই এমন কমিটি আছে। তাহলে কেন আমলাদের দিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে?
সবচেয়ে বড় অভিযোগ হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন, দুর্ঘটনার এত দিন পরেও কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। “আজ পর্যন্ত একটা এফআইআর হয়নি। তার মানে কি মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই? শুধু রাজনীতির স্বার্থে রাজনীতি?” ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, “রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আপনি লড়ে যান। রাহুল গান্ধী ছাড়াও আমরা আরও পলিটিক্যাল পার্টি আছি। এটা মনে রাখবেন সবাই কিন্তু ইমার্জেন্সির সাক্ষী ছিল না। তাদের মতামত নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।” কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি সংস্কৃতির মন্ত্রকের তৈরি করা ফিল্ম এবং সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়গুলিও টেনে আনেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, “যে সব ভারতীয়রা আপনাদের সাপোর্ট করে না।”
স্মরণীয়, আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কয়েক সেকেন্ড পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার AI 171 বিমানটি মেঘানিনগরের একটি মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের উপর ভেঙে পড়েছিল। এই দুর্ঘটনায় গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানীও প্রাণ হারিয়েছেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রমেশ বিশ্বাস কুমার।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ডিজিসিএ এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমানের জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে এই ধরনের বিমান ওড়ানোর আগে অতিরিক্ত সেফটি চেক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে, যারা তিন মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ মন্তব্যে দুর্ঘটনার তদন্ত নতুন মোড় নিতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।