সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পনৌলির জামিন আবেদনের শুনানি আজ কলকাতা হাইকোর্টে। তার আগে শর্মিষ্ঠার বাবা পৃথ্বীরাজ পনৌলি কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন এবং তাঁর মেয়ের ‘পলাতক’ থাকার দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, শর্মিষ্ঠা ও তিনি নিজে লালবাজার এবং আনন্দপুর থানায় গিয়েছিলেন, অথচ পুলিশ তাঁদের পলাতক ঘোষণা করেছে। এই ঘটনা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
পলাতক নয়, থানায় হাজির ছিলেন!
পৃথ্বীরাজ পনৌলির দাবি, কলকাতা পুলিশ ‘স্পষ্টতই ভুল তথ্য’ দিয়েছে। পুলিশের দাবি উড়িয়ে তিনি দুটি “ভিসিটর স্লিপ” পেশ করেছেন। তিনি জানান, এই স্লিপগুলি ১৫ই মে লালবাজারের কলকাতা পুলিশের সদর দফতর থেকে জারি করা হয়েছিল, যেখানে শর্মিষ্ঠা এবং তাঁর নিজের নাম ও ছবি রয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি আমরা পুলিশ সদর দফতরে উপস্থিত থেকে থাকি, তাহলে আমার মেয়েকে পলাতক অভিযোগে কীভাবে গ্রেফতার করা যেতে পারে?” তিনি আরও জানান, ১৭ই মে তাঁরা তাঁদের নিকটতম থানা অর্থাৎ আনন্দপুর থানার দারস্থ হন। শর্মিষ্ঠাকে অশ্লীল ভাষায় ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণকারীদের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য তাঁরা পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন।
পুলিশের পাল্টা দাবি: ‘আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে’
অন্যদিকে, গুরগাঁও থেকে শর্মিষ্ঠা পনৌলিকে গ্রেফতারের পর কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, এই মামলাটি যথাযথভাবে তদন্ত করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করার জন্য বেশ কয়েকটি চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তাঁরা ‘পালিয়ে যান’। পুলিশ আরও বলেছে, “আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, অভিযুক্তকে বিএনএসএস-এর ৩৫ ধারার অধীনে নোটিশ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তাঁরা পালিয়ে যান। আইন অনুযায়ী নোটিশ জারির চেষ্টা সফল না হওয়ায় অভিযুক্ত, তাঁর পরিবার সহ পালিয়ে যায়। পরবর্তীকালে, উপযুক্ত আদালত কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, এর পরে তাঁকে দিনের বেলায় গুরগাঁও থেকে গ্রেফতার করা হয়।”
ঘটনা পরম্পরা নিয়ে প্রশ্ন: ‘৭ মে পোস্ট, ১৫ মে লালবাজার, ১৭ মে ওয়ারেন্ট?’
পৃথ্বীরাজ পনৌলি ঘটনার কালানুক্রম ব্যাখ্যা করে বলেন, “৭ মে শর্মিষ্ঠা একটা পোস্ট করেছিল। ৮ মে তা ডিলিট করে দেয়। ১৫ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, শর্মিষ্ঠা এবং আমি লালবাজার থানায় বসেছিলাম।” তিনি আরও দাবি করেন, “১৭ মে, আমি আনন্দপুর থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল যে দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন।” তিনি এমনকি ১৮ই মে সারা দিন ধরে সেই পুলিশ অফিসারকে মেসেজ পাঠিয়েছেন যিনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং কিছু মেসেজ আনন্দপুর থানাতেও পাঠিয়েছিলেন।
পৃথ্বীরাজের অভিযোগ, ১৭ই মে যখন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, তখন তিনি পুলিশের সঙ্গেই ছিলেন। তাহলে কীভাবে তাঁদের ‘পলাতক’ বলে দাবি করা হচ্ছে? তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “পুলিশ আমাদের ফ্ল্যাটে আসেনি। আমাদের সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন।” তাঁর প্রশ্ন, পুলিশ যদি নোটিশ পাঠাতে চাইতো, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেইলের মাধ্যমেও পাঠাতে পারত, কিন্তু তিনি কোনো নোটিশ পাননি।
গুরগাঁও যাত্রার কারণ: ‘প্রাণভয়ে পালিয়েছিলাম’
শর্মিষ্ঠার বাবা দাবি করেন, ফ্ল্যাটে ফিরে আসার সময় তাঁদের টাওয়ারের চারপাশে সাত থেকে আটজন সন্দেহজনক লোককে লুকিয়ে থাকতে দেখে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজের এবং শর্মিষ্ঠার জন্য গুরগাঁওয়ের বিমানের টিকিট বুক করেন।
তিনি বলেন, “আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কারণ এখানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিল না এবং অনলাইন হুমকিও বাড়ছিল। আমার মেয়ের ফোনে ফোন এবং মেসেজ আসছিল।” তিনি জানান, তাঁরা ১৯শে মে গুরগাঁও রওনা হয়েছিলেন, যদিও ২২শে মে যাওয়ার কথা ছিল। গুরগাঁও পৌঁছানোর পর ২০শে মে থেকে ৩০শে মে পর্যন্ত তাঁরা বিমানবন্দরের পাশে একটি হোটেলে ছিলেন।
পৃথ্বীরাজ পনৌলি দাবি করেন, তিনি গুরগাঁও থেকেও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। শর্মিষ্ঠা ২২শে থেকে ২৯শে মে পর্যন্ত সেখানে ইন্টার্নশিপও করেছিলেন।
সবশেষে, তিনি বলেন, “হঠাৎ, ৩০শে মে, পুলিশ সেখানে (গুরগাঁও) পৌঁছয় এবং তাঁরা বলে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের কিছুই দেখানো হয়নি। এমনকি গ্রেফতারের কারণও আমাদের জানানো হয়নি।” শর্মিষ্ঠার বাবার এই বক্তব্য কার্যত পুলিশের দাবিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। কলকাতা হাইকোর্টে আজকের শুনানি এই মামলার ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।