“নাটক করার জায়গা সংসদ নয়”-শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীদের চরম আক্রমণ মোদীর

সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর ঠিক আগে সোমবার প্রথা অনুযায়ী সংসদ ভবনের বাইরে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অধিবেশনে শীতকালীন মরশুমের আমেজ উপভোগ করার কথা দিয়ে শুরু করলেও, তাঁর ভাষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিরোধীদের প্রতি তীব্র আক্রমণ ও কঠোর বার্তা। প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন, “সংসদ নাটক করার জায়গা নয়।”

বিহারের জনমত ও গণতন্ত্রের শক্তি
ভাষণের শুরুতেই মোদী বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বিহারে যেভাবে জনমত প্রকাশিত হয়েছে, তা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি। মা ও বোনেদের অংশগ্রহণের হার প্রমাণ করে তাঁদের মনে নয়া আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস রয়েছে। একদিকে গণতন্ত্রের শক্তি, অন্যদিকে অর্থনীতির অগ্রগতি— আজ গোটা বিশ্ব ভারতের উপর নজর রেখেছে।”

তিনি স্পষ্ট করে দেন, এই অধিবেশনটি দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরাজয়ের হতাশা ও কড়া কটাক্ষ
প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল বিরোধী শিবির। পরাজয়ের হতাশা থেকে বেরিয়ে এসে গঠনমূলক ভূমিকা নেওয়ার জন্য তিনি বিরোধীদের আহ্বান জানান। কার্যত কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন:

“ওরা পরাজয়ের হতাশা থেকে বেরিয়ে আসুক। তবে দুর্ভাগ্য, কিছু কিছু দল তো পরাজয়ও স্বীকার করতে পারে না। ভেবেছিলাম, বিহারের নির্বাচনের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুটা শুধরে গিয়েছেন। তবে কাল যা গলাবাজি শুনলাম ওদের, পরাজয়ে ওরা অত্যন্ত চিন্তিত বোঝা যাচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এই অধিবেশনে পরাজয়ের জেরে উত্তেজিত হওয়া দলগুলিকে মান্যতা দেওয়া হবে না। পাশাপাশি, বিজয়ের অহঙ্কারের ছায়াটুকুও যেন সংসদ অধিবেশনে না পড়ে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য তিনি নিজ দলের সদস্যদেরও বার্তা দেন।

‘নাটক নয়, ডেলিভারি হওয়া উচিত’
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তরুণ সাংসদদের সমস্যা উঠে আসে। তিনি বলেন, নতুন সাংসদরা নিজেদের এলাকার সমস্যা তুলে ধরতে বা রাষ্ট্রের বিকাশ অভিযানে অংশ নিতে পারছেন না— এই বিষয়টিই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বিরোধীদের লাগাতার বিক্ষোভকে দায়ী করেন।

প্রধানমন্ত্রী কঠোর ভাষায় বলেন:

“নাটক করার অনেক জায়গা রয়েছে। সংসদ নাটক করার জায়গা নয়। যার নাটক করার ইচ্ছে হবে অন্য জায়গায় গিয়ে করবেন। এখানে ড্রামা নয়, ডেলিভারি হওয়া উচিত।”

তিনি মনে করিয়ে দেন, স্লোগানিং করার জন্য গোটা দেশ খালি পড়ে রয়েছে, কিন্তু সংসদে নীতি তৈরি হয়।

রণনীতি বদলের পরামর্শ ও টিপস
নেতিবাচক মনোভাব সরিয়ে রেখে দেশ গড়ার কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সকলকে আর্জি জানান। তাঁর মতে, গত কয়েকটি অধিবেশন থেকে দেখা যাচ্ছে, সংসদকে হয় ভোটের প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, না হয় পরাজয়ের গ্লানি থেকে আসা উত্তেজনা প্রকাশের জায়গা হিসেবে।

বিরোধী দলগুলিকে রণনীতি বদলের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এমন অনেক রাজ্য রয়েছে, যেখানে বিরোধীরা এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মানুষের মধ্যে যেতে পারছেন না। সেই সমস্ত রাগ সংসদে এসে বের করেন বিরোধীরা।”

শেষে মোদীর সংযোজন, “কয়েকটি বিরোধী দল এই ঘটনা ঘটাচ্ছে গত ১০ বছর ধরে। এবার তাদের উচিত নিজেদের রণনীতি বদলে ফেলা। দরকার হলে আমার থেকে টিপস নিয়ে নিন, কীভাবে সংসদে পারফর্ম করবেন। কিন্তু নিজেদের পরাজয় এবং হতাশার জন্য নতুন সাংসদদের অধিকার খর্ব করবেন না।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy