ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় বিপাকে চিংড়ি, গয়না ও কাপড ব্যবসায়ী, বিপদে ভারতীয় রফতানি

রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করায় ভারতের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে আমেরিকা। বুধবার থেকে কার্যকর হলো মার্কিন সরকারের নতুন শুল্কনীতি, যার ফলে ভারতের কিছু পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত কর চাপানো হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের রফতানি ব্যবসার ওপর, যা নিয়ে চিন্তিত এ দেশের ব্যবসায়ীরা।

কোন কোন খাতে প্রভাব পড়বে?

আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (FIEO)-এর মতে, এর ফলে দেশের মোট রফতানি ব্যবসার ৫৫ শতাংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে গয়না, কাপড়, সামুদ্রিক মাছ এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানির ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

  • সামুদ্রিক খাবার: ভারতের রফতানি করা মোট সামুদ্রিক খাবারের ৪০ শতাংশই যায় আমেরিকায়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই বর্ধিত শুল্কের কারণে চিংড়ি রফতানিতে ব্যাপক ক্ষতি হবে, যা সরাসরি মৎস্যজীবী এবং কৃষকদের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলবে।
  • বস্ত্রশিল্প: নয়ডা, সুরাট এবং তিরুপুরের মতো শহর থেকে আমেরিকায় বিপুল পরিমাণে কাপড় রফতানি হয়। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (CITI) জানিয়েছে, নতুন শুল্কের কারণে অনেক রফতানিকারক আপাতত নতুন বরাত নেওয়া বন্ধ রেখেছেন।
  • গয়না: গত অর্থ বছরে ভারত প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার পাথর বসানো গয়না আমেরিকায় রফতানি করেছিল। এই শিল্পেও মন্দা দেখা দিতে পারে।
  • গাড়ির যন্ত্রাংশ: প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকার গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানি হয় আমেরিকায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নতুন নীতির কারণে এই ব্যবসার অর্ধেকই মার খেতে পারে।

চাকরি হারানোর আশঙ্কা এবং অন্য দেশের সুবিধা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রফতানি কমে গেলে অনেক শিল্পে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরোক্ষভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে, আমেরিকা বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের মতো কিছু দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে কম শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে আমেরিকার বাজারে ভারত তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে বস্ত্রশিল্পে।

তবে আশার কথা, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ওপর এই নতুন শুল্ক চাপানো হয়নি।

ভারতের অনমনীয় মনোভাব

যদিও এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ, তবুও সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড়। সম্প্রতি গুজরাটের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট জানিয়েছেন, কৃষকদের এবং ক্ষুদ্র শিল্পের স্বার্থে কোনো আপস করা হবে না। তিনি স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন। মোদীর এই কড়া অবস্থানের পর ট্রাম্প প্রশাসনও বুঝতে পেরেছে যে ভারত সহজে চাপের মুখে মাথা নত করবে না।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy