কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যত বজ্রপাত। জিটিএ-র (GTA) অধীনে থাকা ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ আসতেই বনধের আগুনে জ্বলছে দার্জিলিং ও কালিম্পং। বৃহস্পতিবার থেকে পাহাড়ের সমস্ত সরকারি স্কুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধের ডাক দিয়েছে ‘সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন’।
পরীক্ষা চললেও খুলবে না স্কুল! শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ খাড়কা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা বা রেজাল্ট আউটের দোহাই দিয়ে বনধ আটকানো যাবে না। তাঁর হুঁশিয়ারি— “সংগঠনের আহ্বান উপেক্ষা করে স্কুল খুললে যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তবে তার দায় সংগঠন নেবে না।” অর্থাৎ, আপাতত পাহাড়ের ৩৬০টি মাধ্যমিক স্কুলের পঠনপাঠন সম্পূর্ণ স্তব্ধ হতে চলেছে।
কেন এই ক্ষোভ? কী বলছেন শিক্ষকরা? আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি:
গত ২৫ বছর ধরে এই শিক্ষকরা পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রেখেছেন।
২০০২ সাল থেকে চলা স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি কোনো প্রশাসনিক ত্রুটি থাকে, তবে তার দায় শিক্ষকদের ওপর কেন চাপানো হবে?
তৎকালীন সরকার ও জিটিএ-র ভুলের শাস্তি কেন বর্তমান শিক্ষকরা পাবেন?
কী কারণে চাকরি বাতিল?
২০১৯ সালের জুন মাসে পাহাড়ের স্কুলগুলিতে ৩১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জসুমুদ্দিন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় উঠে আসে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন জিটিএ প্রধান বিনয় তামাং এবং তৃণমূল যুব নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নামও।
বিচারপতির কড়া নির্দেশ: বুধবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি তাঁদের বেতন বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার নেপথ্যে কী রহস্য রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে সিআইডি (CID) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।