বিহারের রাজনীতিতে ‘বাহুবলি সংস্কৃতি’র দীর্ঘ ছায়া ফেলে এবার গ্রেফতার হলেন মোকামার প্রভাবশালী নেতা ও স্বঘোষিত ‘ছোটে সরকার’ অনন্ত কুমার সিং। স্থানীয় নেতা দুলারচাঁদ যাদব হত্যাকাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একসময়ের জনপ্রিয় জননেতা এবং অপরাধ জগতের নাম—এই দুই পরিচয়ের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে থাকা অনন্ত সিং-এর গ্রেফতারিতে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
🔥 ২৮টি ফৌজদারি মামলা, তবুও ‘আমিই আইন’
পাটনা থেকে একশ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত মোকামা প্রায় দুই দশক ধরে অনন্ত সিং-এর রাজত্বের প্রতীক। নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া তাঁর মনোনয়নপত্র অনুযায়ী, বর্তমানে অনন্ত সিং-এর বিরুদ্ধে ২৮টি ফৌজদারি মামলা চলছে, যার মধ্যে রয়েছে খুন, অপহরণ, ষড়যন্ত্র এবং অস্ত্র আইনের মতো গুরুতর অভিযোগ।
জনসমক্ষে তাঁর মন্তব্য:
“মোকামায় আমিই আইন।”
💰 ৪০ কোটি টাকার সম্পত্তি, স্ত্রী বিধায়ক
অনন্ত সিং শুধু রাজনৈতিক বা অপরাধ জগতের দিক থেকে প্রভাবশালী নন, অর্থনৈতিক দিক থেকেও তিনি কম শক্তিশালী নন। হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ₹৩৭.৮৮ কোটি টাকা। তাঁর মালিকানায় রয়েছে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ফরচুনার SUV-এর মতো বিলাসবহুল গাড়ি, এমনকি একটি হাতি, ঘোড়া এবং গবাদি পশুও তাঁর সম্পত্তির অংশ।
তাঁর স্ত্রী নীলম দেবী বর্তমানে আরজেডি-র বিধায়ক, যাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ₹৬২.৭২ কোটি টাকা।
💀 দুলারচাঁদ হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
গত বৃহস্পতিবার মোকামা থেকে উদ্ধার হয় দুলারচাঁদ যাদবের মৃতদেহ। তিনি স্থানীয়ভাবে একসময় গ্যাংস্টার হলেও পরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একটি প্রচার অভিযানে থাকাকালীন সংঘর্ষে তিনি গুরুতর আহত হন। ময়নাতদন্তে প্রকাশ, হৃদয় ও ফুসফুসে আঘাতজনিত শকে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় অনন্ত সিং, মানিকান্ত ঠাকুর ও রঞ্জিত রামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
🗣️ অনন্ত সিং-এর দাবি: ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে’
গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও অনন্ত সিং অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, “আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এটি আমার বিরোধী সুরজ ভানের ষড়যন্ত্র। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অনন্ত সিং-এর মতো নেতারা বিহারের জনমানসে “রবিন হুড”-এর চেহারা পান, কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগও থাকে। এই ঘটনা দেখিয়ে দেয়, বিহারে গণতন্ত্র ও গ্যাংস্টার রাজনীতির সীমারেখা কতটা মিশে গেছে।