কৃষ্ণসাগরে রুশ তেল পরিবহনের মেরুদণ্ড বলে পরিচিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর উপর ফের মারাত্মক হামলা চালাল ইউক্রেন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে রাশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ তেল ট্যাঙ্কার— ‘ভিরাট’ এবং ‘কাইরোস’— ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ (SBU)-এর বিশেষ সমুদ্র-ড্রোন ‘সি বেবি’-র আঘাতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
🚨 ‘মেডে! মেডে!’— ট্যাঙ্কার ক্রুদের জরুরি বার্তা ফাঁস
এই হামলার পরই আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গিয়েছে, রুশ ট্যাঙ্কার ‘ভিরাট’-এর ক্রু খোলা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে এক জরুরি বার্তা সম্প্রচার করেন: “এটা ভিরাট… সাহায্য চাই… ড্রোন অ্যাটাক… মেডে! মেডে!” এই আর্তনাদই আক্রমণের তীব্রতা ও গুরুত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে।
তুরস্কের পরিবহন মন্ত্রক নিশ্চিত করেছে, শনিবার সকালে কৃষ্ণসাগর উপকূল থেকে প্রায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে একটি অজ্ঞাত সাবমারসিবল বাহন ‘ভিরাট’-কে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। জাহাজে আঘাতের চিহ্ন মিললেও আগুন লাগেনি। তবে ট্যাঙ্কারটি ২০ জন ক্রু-সহ ধীর গতিতে তুরস্কের তটের দিকে এগোচ্ছে বলে খবর।
🚩 ‘Flag of Convenience’ কৌশল ব্যর্থ: ইউক্রেনের দাবি
ইউক্রেনের দাবি, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ কৌশলকে ভেঙে দেওয়া। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়া বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বা ‘Flag of Convenience’-এর আওতায় এই তেল ট্যাঙ্কারগুলি ব্যবহার করছিল। জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত দুই ট্যাঙ্কারই গাম্বিয়ার পতাকাবাহী ছিল এবং খালি অবস্থায় রাশিয়ার নভোরোসিস্ক বন্দরে ফিরছিল।
এসবিইউ জানিয়েছে, হামলায় দুই ট্যাঙ্কারই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও অচল। একদিন আগেও ‘কাইরোস’-এ বিস্ফোরণের পর ২৫ জন নাবিককে উদ্ধার করতে হয়েছিল।
🛢️ তেল রুট বন্ধ: রাশিয়ার যুদ্ধ-অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা
এই হামলার প্রভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ-অর্থনীতিতে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ক্যাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম (সিপিসি) জানিয়েছে, নভোরোসিস্ক এলাকায় ড্রোন আক্রমণে তাদের একটি অয়েল লোডিং বার্থ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তেল পরিবহন সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। এর ফলে কৃষ্ণসাগরীয় রুটে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল রফতানিতে বড়সড় ধাক্কা লাগতে চলেছে।
রাশিয়া এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলাটি তাদের সামুদ্রিক সীমার বাইরে ঘটেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের এই অত্যাধুনিক ড্রোন কৌশল কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌপরিবহনের উপর চাপ বাড়িয়ে ভূরাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিতে পারে।