কলকাতায় ফের ‘মৃত্যু-ফাঁদ’, রাজডাঙায় একই পরিবারের তিনজনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার,

কসবার হালতুর বিভীষিকাময় ঘটনার স্মৃতি ফিকে হওয়ার আগেই, এবার রাজডাঙা মেইন রোডে আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা। একই পরিবারের বাবা, মা এবং তাঁদের ৩০ বছরের এক পুত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে একটি সুইসাইড নোট, যা এই গণ-আত্মহত্যার পেছনে এক করুণ কাহিনির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রাজডাঙার শোকাবহ চিত্র: ‘বিশেষভাবে সক্ষম’ পুত্রের যন্ত্রণা?
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজডাঙা মেইন রোডের একটি বাড়িতেই এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে। বাবা-মা এবং তাঁদের যুবক পুত্রের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, দম্পতির ছেলে অসুস্থ ছিলেন, এবং সম্ভবত বিশেষভাবে সক্ষম ছিলেন। এই অসুস্থতা বা অক্ষমতাই কি এই চরম পদক্ষেপের কারণ, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সুইসাইড নোটে কী লেখা আছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটি পরিবারটির মানসিক যন্ত্রণার এক নীরব সাক্ষী বলেই অনুমান করা হচ্ছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

কসবার হালতুর ছায়া: এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার একই ট্র্যাজেডি
এই ঘটনা আরও বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে কারণ মাত্র কয়েক মাস আগেই, গত মার্চ মাসে কসবার হালতুতে একই ধরনের এক মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে হালতুর রায় পরিবারের কর্তা সোমনাথ রায় তার ছোট্ট তিন বছরের ছেলের শরীর নিজের শরীরে বেঁধে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন। সোমনাথ রায়, তার স্ত্রী সুমিত্রা রায় এবং তাদের ৩ বছরের নাবালক পুত্রের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়।

সেই সময়ও পরিবারটির আর্থিক সংকট এবং মানসিক চাপকেই এই চরম সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে অনুমান করা হয়েছিল। রাজডাঙার ঘটনাটি আবারও সেই করুণ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যেখানে পরিবারের সামগ্রিক যন্ত্রণা এক চূড়ান্ত ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক চাপ: প্রশ্নচিহ্নের মুখে সমাজ
রাজডাঙা এবং কসবার এই পরপর দুটি ঘটনা সমাজের সামনে গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরছে। আর্থিক সংকট, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, বা বিশেষভাবে সক্ষম সন্তানের দেখভালের চাপ – এইসব কি পরিবারগুলোকে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে? সমাজের পরিকাঠামো এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কতটা প্রস্তুত এই ধরনের পরিবারগুলিকে সাহায্য করার জন্য?

পুলিশ দুটি ঘটনারই গভীর তদন্ত করছে। কিন্তু এই ট্র্যাজেডিগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক নীরব আর্তনাদের কথা, যা অনেক সময় আমরা শুনতে পাই না, যতক্ষণ না তা এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে পৌঁছায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy