২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্য রাজনীতির ময়দানে দলবদলের হাওয়া তীব্র হচ্ছে। এই হাওয়ায় এবার বড়সড় ধাক্কা খেল উত্তরবঙ্গের কংগ্রেস। দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক শংকর মালাকার তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। আজ, বুধবার, কলকাতার তৃণমূল ভবনে রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সি ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নেবেন।
৭০ বছর বয়সি শংকর মালাকার উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এলাকা থেকে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচিত হয়ে এক দশক ধরে বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা দুই দফায় বিধায়ক ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত এই নেতার প্রভাব তপশিলি সম্প্রদায়সহ একাধিক সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে গভীরভাবে রয়ে গেছে। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা কংগ্রেসের সংগঠনকে উত্তরবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মজবুত করে রেখেছিল।
দলবদল কেন?
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে বিপুল সাফল্য পেলেও উত্তরবঙ্গে সেই দাপট কিছুটা খর্ব ছিল। শংকর মালাকার নিজেও তাঁর আসনে বিজেপির আনন্দময় বর্মনের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু তার পরেও তিনি রাজনীতির ময়দান ছাড়েননি। বরং দল ও সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগ রেখে চলেছেন আজও।
গত কয়েক মাস ধরেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন চলছিল যে, শংকর মালাকার কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। বিশেষ করে কংগ্রেসের রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ দূরত্ব তৈরি হওয়া ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিক থেকে কার্যকরী ভূমিকার অভাব তাঁর মতো অভিজ্ঞ নেতাকে হতাশ করেছিল বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। সেই গুঞ্জন অবশেষে সত্যি হতে চলেছে।
তৃণমূলের কৌশল ও মালাকারের ভূমিকা
তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব শংকর মালাকারের যোগদানে যথেষ্ট আশাবাদী। উত্তরবঙ্গে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি ভাঙতে তাঁকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে দল। বিশেষ করে তপশিলি ভোটব্যাঙ্কে তাঁর প্রভাব কাজে লাগাতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এর আগে এই অঞ্চলে দলের সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও প্রাক্তন মেয়র গৌতম দেব। এবার তাদের সঙ্গে মালাকারকে যুক্ত করে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে তৃণমূল।
যদিও দলবদলের পর তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা এখনই চূড়ান্ত হয়নি। সব সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শংকর মালাকারকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গের কৌশলগত কয়েকটি কেন্দ্রে দল নতুন করে সংগঠন ঢেলে সাজাতে পারে।
কংগ্রেসের জন্য বড় ধাক্কা
এই দলবদল কংগ্রেসের পক্ষে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। কারণ, শংকর মালাকারের নেতৃত্বে ওই অঞ্চলে দল এখনও কিছুটা জমি ধরে রেখেছিল। তাঁর বিদায়ে সেখানে কংগ্রেস কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা করছে দলের একাংশ।
অন্যদিকে, তৃণমূলের আশা, অভিজ্ঞ নেতার হাত ধরেই উত্তরবঙ্গে আবার সংগঠন চাঙ্গা করা যাবে। বিশেষত গেরুয়া শিবিরের গড়ে ‘জোড়াফুল’ ফুটিয়ে তোলার এই প্রচেষ্টায় মালাকারের আগমন নতুন অক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।