লাদাখের পরিবেশ ও অধিকার কর্মী সোনম ওয়াংচুককে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA) এবং সন্ত্রাস দমন আইনে (UAPA) গ্রেফতার করার ঘটনায় এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি। স্বামীর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, একজন পরিবেশ কর্মীকে কেন এমন কঠোর আইনে গ্রেফতার করে যোধপুরের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
তাঁর অভিযোগ, লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সোনম ওয়াংচুক বিগত কয়েক বছর ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কিন্তু এর পরিবর্তে তাঁকে পরিকল্পনা করে ‘দেশবিরোধী’ তকমা দেওয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যোগের অভিযোগ: সুপ্রিম কোর্টে পালটা প্রশ্ন
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) এবং লাদাখ পুলিশের পক্ষ থেকে সোনমের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগাযোগের প্রচার চালানো হচ্ছে।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোনম-পত্নী সুপ্রিম কোর্টে স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী গোপনে পাকিস্তানে যাননি। ভারত সরকারের অনুমতি নিয়েই তিনি পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশ নিতে বিদেশে গিয়েছিলেন।
লাদাখ পুলিশের প্রধান সম্প্রতি একজন পাকিস্তানি গুপ্তচরকে গ্রেফতারের দাবি করে বলেন, সে নাকি সোনমের আন্দোলনের ভিডিও প্রচার করে জনমত তৈরি করছিল। এই দাবির ভিত্তিতে গীতাঞ্জলি তাঁর মামলায় তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন— “যদি পুলিশ সত্যিই পাকিস্তানি গুপ্তচরকে গ্রেফতার করে থাকে, তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী জবাব দিক, কী করে একজন বিদেশি ভারতে প্রবেশ করে এই কাজ করতে পারল?” তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তাঁর স্বামী স্থানীয় মানুষের দাবিতে আন্দোলন করছেন, এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই।
হিংসা ও সরকারের অভিযোগ
গত ২৪ সেপ্টেম্বর লাদাখে সোনমের আন্দোলনের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হন। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, ওই ঘটনার পেছনে সোনম ওয়াংচুকের ইন্ধন ছিল এবং হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পরই তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতারের ঘটনায় দেশব্যাপী মানবাধিকার সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়েছে। তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলির এই আইনি পদক্ষেপ কেন্দ্র ও লাদাখ প্রশাসনের ওপর চাপ আরও বাড়াল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।