ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এবার কি এক পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে চলেছে? আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’ (CFR)-এর সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক ভয়াবহ সশস্ত্র সংঘাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করার পাশাপাশি মার্কিন স্বার্থেও আঘাত হানতে পারে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে সীমান্তে আপেক্ষিক যুদ্ধবিরতি চললেও পর্দার আড়ালে দুই দেশই যুদ্ধের প্রস্তুতিতে মগ্ন। ভারত সম্প্রতি সামরিক খাতে বড়সড় বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রায় ৭৯,০০০ কোটি টাকার ড্রোন, আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক মিসাইল এবং গাইডেড বোমা ক্রয়ের সবুজ সংকেত দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানও পিছিয়ে নেই। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় নিজেদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের শোচনীয় ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এখন তুরস্ক এবং চিনের থেকে নতুন ড্রোন ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মে মাসে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। ২২শে এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান-মদদপুষ্ট জঙ্গি হামলার পর ভারত পালটা ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে। সেই সময় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। ভারতের সেই প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ও পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। চার দিনের সেই ছোট আকারের যুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার দেখেছিল বিশ্ব।
তবে বিপত্তি শুধু ভারতের দিক থেকেই নয়। সিএফআর-এর রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যেও যুদ্ধের ‘মাঝারি সম্ভাবনা’ রয়েছে। অর্থাৎ, আগামী দুই বছরের মধ্যে পাকিস্তান এক চরম সংকটের মুখে পড়তে চলেছে। একদিকে ভারতের সামরিক শক্তি এবং অন্যদিকে আফগানিস্তান সীমান্তের অস্থিরতা—সব মিলিয়ে ইসলামাবাদ কার্যত এক ‘টু-ফ্রন্ট ওয়ার’ বা দ্বিমুখী যুদ্ধের আশঙ্কায় দিন গুনছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই বিশাল অস্ত্র ক্রয় এবং পাকিস্তানের নতুন প্রতিরক্ষা নীতি ভবিষ্যতে এক বড়সড় সংঘাতের পটভূমি তৈরি করছে।