দীর্ঘ ৫ মাস পর অবশেষে নিজের গ্রামে ফিরলেন বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি বিবি ও তাঁর নাবালক সন্তান। শনিবার দুপুর ২টো নাগাদ মালদা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সরাসরি বীরভূমের পাইকর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। তবে রক্তশূন্যতার (Anaemia) সমস্যায় ভুগছেন সোনালি। তাই আত্মীয়দের সঙ্গে মাত্র ১০ মিনিটের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে বসেই দেখা করার পর তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আপাতত সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলবে।
২৫ জুন দিল্লিতে থাকাকালীন বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সোনালি বিবি-সহ ৬ জন। এর তিন দিন পরই, ২৬ জুন অসম বর্ডার দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেয় দিল্লি পুলিশ। সেখানে ২০ আগস্ট বাংলাদেশের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে তাঁরা ১০১ দিন জেল হেফাজতে ছিলেন। গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে।
সোনালি ও তাঁর সন্তানকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে কলকাতা হাই কোর্টের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের হয়েছিল। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরই তাঁদের বাংলাদেশে থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। যদিও সোনালির স্বামী এবং সুইটি বিবির পরিবারের সদস্যরা এখনও বাংলাদেশে রয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে সোনালির পরিবার আপ্লুত। সোনালির বৌদি সীমা বিবি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “এখনও আমার নন্দাই দানেশ শেখ বাংলাদেশে। কাগজ থাকার পরেও মোদি সরকার এঁদের বাংলাদেশের জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। ভালোভাবে খেতে দেওয়া হয়নি, তাই রক্তশূন্য হয়ে গেছে।”
সোনালির ঘরে ফেরাকে বাংলার শাসক শিবির আইনি লড়াই ও মানবিকতার জয় হিসেবে দেখছে। তৃণমূল ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই ঘটনাকে কেন্দ্রের “ঘৃণ্য চক্রান্তের” বিরুদ্ধে বড় জয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাশাপাশি বিএসএফের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন। শাসকদলের দাবি, শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী এবং বাংলাভাষী হওয়ার কারণেই সোনালিকে এই চরম হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।
পাইকর গ্রামে উপস্থিত হয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামরিকুল ইসলাম বলেন, “মোদি সরকার এখন ইংরেজদের মতো ব্যবহার করছে। বাংলা ভাষায় কথা বললেই অত্যাচার করা হচ্ছে। আমরা সবসময় অত্যাচারিতদের পাশে আছি। যতক্ষণ না সুইটি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে আসছেন, ততক্ষণ আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বললেই জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে।