‘অপারেশন সিঁদুর’: ভারত-পাক সংঘাতে সৌদির মধ্যস্থতা, ইসাক দারের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইসাক দারের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে সৌদি আরবের পর্দার আড়ালের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে পাকিস্তান যখন দিশেহারা, তখন সৌদি আরবই ভারতকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল। এই ঘটনা শুধু দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতাই নয়, আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে সৌদি আরবের প্রভাবও তুলে ধরে।

জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসাক দার নিজেই সেই রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ভারত নূর খান এবং শোরকোট বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করার আগেই পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছিল। দারের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দেওয়ার বা প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগই দেয়নি, যা পাকিস্তানের প্রশাসনকে অবাক করে দিয়েছিল।

ইসাক দার জানান, “ভারতের আক্রমণের পর, প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা দেন। আমাদের কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তার বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা ৪টের পর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই রাতেই আড়াইটের দিকে শোরকোট বিমানঘাঁটির নূর খান বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করে ভারত।”

সংঘর্ষের ঠিক ৪৫ মিনিট পরেই সৌদি যুবরাজ ফয়জল সাহেবের ফোন আসে। তিনি জানান, মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও-র সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে এবং জয়শঙ্কর (ভারতের বিদেশমন্ত্রী) যদি কথা বলতে ইচ্ছুক হন, তবে তাঁরা মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। দারের উত্তর ছিল স্পষ্ট: “হ্যাঁ, পাকিস্তান এর জন্য প্রস্তুত। আপনারা সৌদি যুবরাজের সঙ্গে কথা বলুন।” পরে সৌদি যুবরাজ জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এই কথোপকথন থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সৌদি আরব এক নীরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ইসাক দারের স্বীকারোক্তি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং অন্যান্য শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের পূর্বের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে, যেখানে তারা পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে কড়া জবাব দেওয়ার দাবি করেছিলেন। আসলে, পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল কেবল ভারতের প্রতিশোধ নেওয়া। এ অবস্থায় পাকিস্তান আমেরিকা, সৌদি আরব এবং কাতারের মতো দেশগুলির কাছে কূটনৈতিক সাহায্য চেয়েছিল।

শাহবাজ শরিফ নিজেও পরে স্বীকার করেছেন যে, ভারত ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আক্রমণ করেছিল।

গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এর সন্ত্রাসী শিবির এবং সামরিক স্থাপনাগুলিতে বেশ কয়েকটি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতের এই আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তান হতবাক হয়ে ৮, ৯ এবং ১০ মে ভারতীয় সামরিক স্থাপনাগুলিতে পাল্টা আক্রমণের ব্যর্থ চেষ্টা করে। তবে, ভারত আরও শক্তিশালী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে, পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলিতে আক্রমণ করে এবং তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়। চার দিন ধরে উত্তেজনা এবং সীমান্ত আক্রমণের পর, পাকিস্তানের অনুরোধে ভারত ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

ইসাক দারের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আসল চিত্রই তুলে ধরছে না, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা এবং পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া কূটনৈতিক কার্যকলাপের গুরুত্বও পুনর্বার প্রমাণ করছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy