প্রবল বর্ষণ ও ভয়াবহ বন্যা কেবল মানুষকে নয়, উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের জীবনও কেড়ে নিয়েছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া লাগাতার বৃষ্টি ও ভূমিধসের জেরে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ জঙ্গল এখন বিপর্যস্ত।
বন দফতর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত বনকর্মীরা মোট ৮টি বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। মৃত প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে একটি মাদী গণ্ডার, একটি চিতা, দুটি গাউর (বন্য মহিষ) এবং চারটি সাম্বর হরিণ।
উদ্ধার হলো নেপালের হাতিশাবক
বিপর্যয়ের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির খবরও মিলেছে। নেপালের মেচি নদী পার হওয়ার সময় তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়েছিল এক মাস বয়সী হাতিশাবক। তবে ভারতের বনকর্মীরা সময়মতো তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। শাবকটিকে বর্তমানে নিরাপদে রাখা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, তার পালের সঙ্গে পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাতির পাল ইতিমধ্যেই ভারতীয় অংশে প্রবেশ করেছে, তাই শাবকটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জলমগ্ন, দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো কঠিন
বন দফতর জানিয়েছে, মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হলেও অনেক এলাকা এখনও জলমগ্ন এবং দুর্গম। সিনিয়র আইএফএস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরও প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তথ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও প্লাবিত। রাস্তাঘাট ধুয়ে যাওয়ায় অনেক দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো যায়নি। জলমগ্ন এলাকায় কার্যক্রম সীমিত হলেও বনকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ: উন্নত সতর্কতা ব্যবস্থা প্রয়োজন
IMD সাব-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় আগামী কয়েকদিনের জন্য ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অসময়ে ভারী বৃষ্টি উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণীর জন্য নতুন বিপদের কারণ। তাঁরা বন্যপ্রাণ সুরক্ষার স্বার্থে উন্নত সতর্কতা ব্যবস্থা, উদ্ধার অবকাঠামো এবং বনাঞ্চলে পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।