মোবাইল চুরির অপবাদে নাবালককে নির্যাতন, উল্টো করে ঝুলিয়ে শক দিয়ে টর্চার

মোবাইল চুরির মিথ্যা অপবাদে এক নাবালককে উল্টো করে ঝুলিয়ে বিদ্যুতের শক দেওয়ার ভয়াবহ ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে সন্তোষপুরের একটি কারখানায়। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি TV9 বাংলা, কিন্তু এর জেরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই ঘটনার সূত্র ধরে TV9 বাংলার প্রতিনিধি পৌঁছেছিলেন নিগৃহীত নাবালকের জন্মস্থান উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। সেখানে গিয়ে যে চিত্র সামনে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক—এ যেন দেশের কলকারখানায় নাবালক যোগানের এক ‘আঁতুরঘর’।

ইসলামপুরের মাটিকুন্ডা এলাকায় শিশুশ্রম বিরোধী আইন কার্যত অর্থহীন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সামান্য অর্থের বিনিময়ে ছোট শিশু-কিশোরদের এখান থেকেই বিভিন্ন কলকারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতিত ওই নাবালককে এভাবেই ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত শাহেনশাহ। কাজ করার পর টাকা চাইতে গেলেই তাকে চোর অপবাদ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো শাহেনশাহ নাবালকের পরিবারের কাছে ২ লক্ষ টাকা দাবি করে। পরিবারের অভিযোগ, শাহেনশাহ নাকি ফোনে হুমকি দিয়েছিল, “টাকা দাও ছেলে নাও।”

এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই গ্রামের বহু কিশোরকে এভাবেই কলকাতা বা অন্য শহরের কলকারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ কিশোরের মা বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। তার একটাই আর্তি, “ছোট ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।” কিশোরের বাবা দিল মহম্মদের স্পষ্ট বক্তব্য, “আমার ছেলে চুরি করেনি। তাও ওই মোবাইলের দাম এবং দাবি মতো দু’লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এরপর আর ছোট ছেলের খোঁজ মেলেনি।”

এই ঘটনা আবারও শিশুশ্রমের ভয়াবহতা এবং এই সংক্রান্ত আইনের দুর্বল প্রয়োগের বিষয়টি সামনে এনেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই ধরনের মানব পাচার এবং শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নিখোঁজ কিশোরের দ্রুত সন্ধান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে সব মহল থেকে। এই ঘটনার তদন্তে নতুন তথ্য বেরিয়ে এলে, তা দেশের কলকারখানাগুলোতে শিশুশ্রমের ব্যাপকতা সম্পর্কে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন চিত্র তুলে ধরবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy