পরপর দুই দিনের মাওবাদী বিরোধী অভিযানে দেশীয় নিরাপত্তাবাহিনী বড়সড় সাফল্য পেলেও এক অসীম সাহসী আধিকারিককে হারাল। মঙ্গলবারের সফল অভিযানের পর বুধবার ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মোট ১৩ জন মাওবাদীকে খতম করেছে বাহিনী। তবে মাওবাদী দমনের পরিচিত মুখ, মধ্যপ্রদেশের হক ফোর্সের ইন্সপেক্টর আশিস শর্মা (৪০) শহীদ হয়েছেন।
বুধবারের সংঘর্ষ ও আশিস শর্মার শাহাদাত:
-
তথ্য: পুলিশ সূত্রে খবর, ছত্তিসগড়–মধ্যপ্রদেশ–মহারাষ্ট্রের ত্রিবেণী সংযোগস্থল কাঙ্ঘুরার ঘন জঙ্গলে মাওবাদীদের একটি দলের লুকিয়ে থাকার খবর আসে।
-
অভিযান: সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার সকালে তিন রাজ্যের নিরাপত্তাবাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন বালাঘাট জেলার পরিচিত মুখ হক ফোর্সের ইন্সপেক্টর আশিস শর্মা।
-
সংঘর্ষ: বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে মাওবাদীরা আচমকাই গুলি চালাতে শুরু করে। প্রচণ্ড গুলির লড়াইয়ের মধ্যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় আশিসের পেটে গুলি লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায়ও তিনি সহকর্মীদের সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান।
-
মৃত্যু: গুরুতর আহত আশিস শর্মাকে দ্রুত রাজনন্দগাঁওয়ের ডোনগারগড় কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে বড় হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলাকালীনই এই বীর আধিকারিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শহিদ আধিকারিকের পরিচিতি:
মধ্যপ্রদেশের স্পেশাল ডিজি (মাও দমন অপারেশন) পঙ্কজ শ্রীবাস্তব জানান, “হক ফোর্সের অন্যতম সেরা ও সাহসী অফিসার ছিলেন আশিস। বহু অভিযান তাঁর নেতৃত্বে সফল হয়েছে। তিনি দু’বার গ্যালান্ট্রি মেডেল পেয়েছিলেন।” হক ফোর্সের এই বিশেষ বাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ এবং সক্রিয় আধিকারিক ছিলেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাউন্দার জঙ্গলে তিন মহিলা মাওবাদীকে খতম করার সফল অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা এবং প্রমোশন পান। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘মাওবাদী দমনে ফ্রন্টলাইন কমান্ডার’ হিসেবে স্মরণ করছেন।
দুই দিনের অভিযানের সাফল্য:
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য মাওবাদী সংগঠনের কোর নেটওয়ার্কে বড় ধাক্কা দিয়েছে:
-
প্রথম দিন (মঙ্গলবার): ছত্তিসগড়ের সুকমা লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামরাজু জেলায় পুলিশ এনকাউন্টারে খতম হয় মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতা মাদভি হিডমা, তাঁর স্ত্রী-সহ চার সহযোগী।
-
দ্বিতীয় দিন (বুধবার): অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামরাজু জেলার মারেদুমিল্লির জঙ্গলে গুলির লড়াইয়ে তিন মহিলা মাওবাদী-সহ মোট সাতজন খতম হয়। ঘটনাস্থল থেকে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক এবং নথি উদ্ধার হয়।
মোট ১৩ জন মাওবাদী নিহতের পর নিরাপত্তাবাহিনীর দাবি, দক্ষিণ ছত্তিসগড় থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্তে মাওবাদী কার্যকলাপ ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। যদিও ইন্সপেক্টর আশিস শর্মার মতো অভিজ্ঞ অফিসারের মৃত্যু বাহিনীর কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের মানুষ এই বীর শহিদকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।