মুম্বইয়ের পাওয়াইয়ে ১৭ শিশু-কিশোরকে পণবন্দি করার নাটকীয় ঘটনাটি যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, তা স্পষ্ট হয়েছে পুলিশের তদন্তে। অভিযুক্ত রোহিত আর্য (Rohit Arya) ওয়েব সিরিজের অডিশনের নাম করে শিশুদের স্টুডিওয় আটকে রাখার এই ছকটি আগে থেকেই ঠান্ডা মাথায় সাজিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর পুলিশ বাচ্চাদের উদ্ধার করে এবং সংঘর্ষে আর্য গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
প্রস্তুতিতে ছিল দীর্ঘ অবরোধের ইঙ্গিত:
তদন্তে পুলিশের হাতে এসেছে আর্যের দীর্ঘ অবরোধের প্রস্তুতির ইঙ্গিত।
সন্দেহের সূত্রপাত: গত সপ্তাহেই বাচ্চাদের অডিশনের জন্য ডাকা হয় এবং ২৬ অক্টোবর থেকে ‘শুটিং’ শুরু হয়। মঙ্গলবার থেকেই স্টুডিওর জানালা-দরজা কালো কাগজে ঢেকে ফেলা হয়। শিশুদের আত্মীয়দের বলা হয়েছিল, সূর্যের আলোয় শুটিং হচ্ছিল না বলে এমনটা করা হয়েছে।
মজুত ও নজরদারি: স্টুডিওর দরজার নষ্ট তালা আগেই সারানো হয়েছিল। প্রচুর পরিমাণে খাবার মজুত রাখা হয়েছিল। বাইরে থেকে কেউ ঢুকছে কিনা, তা সঙ্গে সঙ্গে টের পেতে বসানো হয়েছিল মুভমেন্ট সেন্সর। এছাড়াও, আর্য মোবাইলে নজর রাখছিলেন সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে।
অপহরণের গল্পে ভুল বোঝানো:
আর্য তাঁর সহকারী রোহন রাজ আহেরকে বলেন, তিনি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাচ্চাদের বিদ্রোহ’ নিয়ে একটি শর্ট ফিল্ম তৈরি করছেন, যার মধ্যে একটি ‘অপহরণের দৃশ্য’ও রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি শিশুদের মুখে টেপ লাগিয়ে বলেন, আজ অপহরণের দৃশ্য শ্যুট হবে।
চরম ছকের ইঙ্গিত:
পেট্রোল ও দাহ্য তরল: আর্যের সহকারী পুলিশকে জানান, তাঁকে পাঁচ লিটার পেট্রোল ও আতশবাজি আনতে বলা হয়েছিল। আর্য স্টুডিওর মেঝেতেও দাহ্য তরল ছড়িয়ে রেখেছিলেন এবং এক সময়ে চার শিশুকে সামনে রেখে আগুন লাগানোর হুমকি দেন।
আতঙ্ক: দুপুর দেড়টা নাগাদ বাচ্চারা বাইরে না আসায় আর্য তাঁদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় ভিডিও অভিভাবকদের কাছে পাঠান, তখনই পণবন্দি হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
পুলিশি তৎপরতায় মুক্তি:
পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় পুলিশ কৌশলে বিল্ডিংয়ের নীচের ফ্লোরে থাকা সহকারীকে কাজে লাগায়। তাঁর সহায়তায় এক পুলিশকর্মী বাথরুমের জানলা দিয়ে স্টুডিওতে প্রবেশ করেন এবং অন্য দলকে পথ দেখান। মুখোমুখি সংঘর্ষে আর্য গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। সব বাচ্চাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।