ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিয়ে অবশেষে ‘সুরবদল’ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতদিন ধরে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জাহির করে আসা ট্রাম্প এবার হঠাৎই দাবি করলেন যে, ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই সংঘাত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই ভোলবদল কূটনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমি ওঁকে (মুনির) ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ ওঁরা যুদ্ধের পথে হাঁটেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “কয়েক সপ্তাহ আগেই মোদীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কথাও হয়েছে। খুব খুশি যে, দুই স্মার্ট ব্যক্তি যুদ্ধের পথে হাঁটেননি। পরমাণু যুদ্ধ হতে পারত। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ। ওরাই সিদ্ধান্ত নিল।” এই মন্তব্যের আগে তিনি মুনিরের উপস্থিতিতে পাকিস্তানকে ‘ভালোবাসি’ বলেও মন্তব্য করেন, যা ভারতের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক চুক্তির আবহে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ দ্বারা পাকিস্তানের জঙ্গি শিবির ধ্বংস হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যাঘাতে পাকিস্তান কোণঠাসা হয়ে পড়লে, অবশেষে তারা যুদ্ধবিরতির আবেদন জানায়। ভারত সেই আবেদনে সাড়া দেয় এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে যুদ্ধবিরতির খবর প্রকাশ করে বিতর্কের সূত্রপাত করেন। তখন ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, পাকিস্তানের অনুরোধেই ভারত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে এবং এতে আমেরিকার কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি, গতকালও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনে এই একই বার্তা দেন বলে জানা গেছে। এর ঠিক পরপরই ট্রাম্পের এই ‘স্বীকৃতি’ বা ‘সুরবদল’ ঘটনাপ্রবাহে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য একদিকে যেমন তার পূর্বেকার বিতর্কিত দাবি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত, তেমনই অন্যদিকে পাকিস্তানকে খুশি করার একটি প্রচেষ্টা। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের আবহে পাকিস্তানকে পাশে পাওয়ার একটি কৌশলও হতে পারে এটি। তবে ভারতের দিক থেকে স্পষ্ট বার্তা পাওয়ার পরই ট্রাম্পের এই ‘ক্রেডিট’ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সাফল্যেরই পরিচায়ক বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যেখানে প্রতিটি শব্দ ওজন করা হয়, সেখানে ট্রাম্পের এই বাক্যবন্ধ নিশ্চিতভাবেই আরও কিছুদিন কূটনৈতিক মহলে আলোচনার খোরাক জোগাবে।