স্কুল খোলার কথা সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে, কিন্তু শিক্ষকরাই নিয়মিত দেরি করে আসছেন। আর এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে ইড়পালা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুলের ২০ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ১২ জন শিক্ষক প্রায়ই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে স্কুলে আসেন, যার ফলে ক্লাস শুরু হতে দেরি হয়।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষকদের স্কুলে হাজির থাকতে হয়। এর পর ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রথম ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী সপ্তক প্রধানের কথায়, ‘স্যররা রোজ দেরিতে আসেন বলে ক্লাস শুরু হতেও দেরি হয়। অথচ আমরা যদি প্রার্থনার পর স্কুলে ঢুকি, তাহলে বকুনি খেতে হয়, এমনকি অনেক সময় স্কুলে ঢুকতেই দেওয়া হয় না।’
অভিভাবকরাও এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। রীতা পাঠক নামে একজন স্থানীয় অভিভাবক জানান, মিটিংয়ে বারবার এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি।
শিক্ষকরা দেরি করে আসার পেছনে যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থাকে দায়ী করছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিনয় চৌধুরী বলেন, ‘বানভাসি পরিস্থিতির পর থেকে রাস্তাঘাট খারাপ হয়ে গেছে, তাই শিক্ষকরা সময়মতো পৌঁছতে পারছেন না।’ তিনি এই সমস্যা নিয়ে একটি মিটিং ডাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে স্থানীয় অভিভাবকরা মনে করছেন, প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকাই এই অব্যবস্থার মূল কারণ। তাঁদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের কথা অনেকে মানতে চাইছেন না। স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য রঞ্জন সামন্ত বলেন, ‘আমরা বারবার তাদের সতর্ক করেছি, কিন্তু প্রধান শিক্ষক না থাকায় সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।’
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামন্ত জানান, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক পরপর তিন দিন দেরিতে এলে তার একটি ছুটির দিন কাটা যাবে।’
শিক্ষকদের এই উদাসীনতার কারণে স্কুলের পরিবেশ এবং শিক্ষার মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে স্কুলের ইউনিট টেস্টে ইতিহাসে ভূগোলের প্রশ্ন আসার ঘটনাও এই অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে। অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলের পড়াশোনার মান খারাপ হওয়ায় তাদের সন্তানদের প্রাইভেট টিউশনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সিপিএম নেতা প্রভাস মাজি এই ঘটনার সমালোচনা করে বলেন, ‘শিক্ষকরা নিজেরাই যদি নিয়ম না মানেন, তাহলে তারা ছাত্রদের শৃঙ্খলার পাঠ দেবেন কীভাবে?’