পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের ‘SIR’ (Special Inquiry Report) বা বিশেষ তদন্ত রিপোর্ট। ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়ায় মৃত বা ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও, কার্যত হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে সমাজের বিশিষ্ট থেকে সাধারণ মানুষকে। এবার সেই তালিকার নবতম সংযোজন কিংবদন্তি কবি জয় গোস্বামী এবং বাম আমলের প্রাক্তন দাপুটে মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, কবি জয় গোস্বামী এবং তাঁর পরিবারের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় এবং সাম্প্রতিক খসড়াতেও ছিল। তা সত্ত্বেও কবিকে সশরীরে শুনানিতে হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠিয়েছে কমিশন। কবির কন্যা দেবত্রী গোস্বামী জানিয়েছেন, সম্প্রতি কবির চোখের বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই অসুস্থ অবস্থায় এক অশীতিপর বৃদ্ধকে কমিশনের দপ্তরে গিয়ে হাজিরা দিতে বলা অত্যন্ত অমানবিক। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ ছড়াতেই নড়েচড়ে বসেছে কমিশন। তড়িঘড়ি কমিশনের পক্ষ থেকে কবির পরিবারকে ফোন করে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জয় গোস্বামী যে গত লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে দেবত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন এই বয়সে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে?”
অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক তথা ১০ বছরের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কেও আগামী ২ জানুয়ারি শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নোটিশ দেখে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েছেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, যিনি একাধিকবার বিধায়ক, মন্ত্রী, কাউন্সিলর এবং বরো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন, তাঁর নাগরিকত্ব বা ভোটার তালিকায় নাম নিয়ে কেন হঠাৎ এমন শুনানি? ইতিমধ্যেই কমিশনকে কড়া চিঠি দিয়ে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ও ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়েই তিনি হিয়ারিংয়ে উপস্থিত থাকবেন।
SIR শুনানির এই দাপটে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে গোটা রাজ্যে। হুইলচেয়ারে থাকা বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের রোগীদেরও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শুনানিতে অংশ নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘বাড়িতে বসে হিয়ারিং’ বা সহযোগিতার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েই যাচ্ছে। বিশিষ্টজনদের এই তলব ঘিরে এখন প্রশাসনের অন্দরেও অস্বস্তি বাড়ছে।