স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মজবুত করার পাশাপাশি মানব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, যৌন মিলন এক প্রকার শরীরচর্চাও বটে। কিন্তু এই তথ্যটি কতটা সঠিক, বা ঠিক কতটুকু ক্যালরি এই প্রক্রিয়ায় ব্যয় হয়, তা নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা এই বিষয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে।
সহবাস ও ক্যালরি ক্ষয়: গবেষণায় যা বলছে
গবেষকদের মতে, সহবাসকে হালকা থেকে পরিমিত শরীরচর্চার সমতুল্য বলা যেতে পারে। তবে দৌড়ানো বা জিমে ব্যায়াম করার মতো উচ্চ ক্যালরি ক্ষয় এতে হয় না। ক্যালরি ব্যয়ের পরিমাণ নির্ভর করে ব্যক্তির ওজন, যৌন কর্মের স্থায়িত্ব এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ের ওপর।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সহবাসের সময় পুরুষদের গড়ে প্রতি মিনিটে ৪.২ ক্যালরি, অর্থাৎ মোট ১০১ ক্যালরি পুড়তে পারে। অন্যদিকে, নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ৩.২ ক্যালরি, অর্থাৎ মোট ৬৯ ক্যালরি ব্যয় হতে পারে। এই গবেষণাটি সুস্থ ও অল্পবয়সী নারী-পুরুষের উপর চালানো হয়েছিল এবং ফোরপ্লে থেকে অর্গাজম পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
মন্ট্রিলের ইউনিভার্সিটি অব কুইবেকের ডিপার্টমেন্ট অব এক্সারসাইজ সায়েন্সের অধ্যাপক অ্যান্টনি কারেলিস স্পষ্ট করে বলেছেন, “সহবাসের সময় শরীর থেকে যে শক্তি ব্যয় হয় তা ব্যায়ামের তুলনায় উল্লেখযোগ্য নয়।” একই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ট্রেডমিলেও শরীরচর্চা করতে বলা হয়, যেখানে দেখা যায় পুরুষদের প্রতি মিনিটে ৯.২ ক্যালরি এবং নারীদের প্রতি মিনিটে ৭.১ ক্যালরি পুড়েছে। অর্থাৎ, ট্রেডমিলে শরীরচর্চায় সহবাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরি ক্ষয় হয়।
আরেকটি গবেষণায় অনুরূপ ফল পাওয়া গেছে: ৩০ বছর বয়সী পুরুষদের ছয় মিনিটের সহবাসে মাত্র ২১ ক্যালরি পুড়তে পারে। ফোরপ্লে বাদ দিলে সহবাসের গড় স্থায়িত্ব সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় মিনিট। ব্যক্তিভেদে এর চেয়ে কম বা বেশি ক্যালরি ক্ষয় হতে পারে।
ক্যালরি বাড়ানোর কৌশল ও বিশেষজ্ঞদের মত:
যদি সহবাসের সময় ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়াতে চান, তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনার পজিশন উপরে হলে বেশি নড়াচড়া হবে, ফলে শক্তির ক্ষয়ও বেশি হবে। যদি চান নারীর বেশি ক্যালরি পুড়ুক, তাহলে কিছুক্ষণ পর আপনাকে নিচের পজিশনে চলে যেতে হবে। এভাবে উভয়েই উপকৃত হতে পারেন। ডা. কারেলিসের মতে, সহবাসের সময় ঘাম নিঃসরণ বেশি ক্যালরি ক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়।
তবে, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথের অধ্যাপক ডেবি হার্বেনিক সহবাসের সময় ক্যালরি পোড়ানোর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সেক্স পজিশনে যেতে অনুৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, “সহবাসের অনেক পজিশন রয়েছে। কিন্তু লোকজনের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, সেই পজিশনে সহবাস করুন যা উভয়কেই আনন্দ দেয়। এ সময় কত ক্যালরি পুড়বে তা বিবেচনা করবেন না।” তার মতে, ফোরপ্লে-র সঙ্গে হালকা শরীরচর্চা যোগ করলে ক্যালরি পোড়ানোর পাশাপাশি যৌনমিলনও বেশ উপভোগ্য হতে পারে।
সহবাসের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা:
যদিও ক্যালরি পোড়ানোর দিক থেকে সহবাস অন্যান্য ব্যায়ামের চেয়ে পিছিয়ে, এর অসংখ্য শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা অনস্বীকার্য:
ঘুমের মান বাড়ায়: মানসিক চাপ কমিয়ে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ কমায়: গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যৌন মিলন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ব্যথা উপশম করে: শরীর থেকে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হওয়ায় ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।
পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: নিয়মিত ইজাকুলেশন এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
নারীদের পেলভিস পেশী শক্তিশালী করে: যা পেলভিক ফ্লোরের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
রোগ দমনের ক্ষমতা বাড়ায়: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
মেজাজ ভালো রাখে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়: যা সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে।
সুতরাং, ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ যাই হোক না কেন, সুস্থ জীবন এবং সুন্দর সম্পর্কের জন্য যৌন মিলনের গুরুত্ব অপরিসীম।