মাথার ত্বকের ব্রণ,শুধু মুখের সমস্যা নয়, ‘স্ক্যাল্প পিম্পল’ থেকে মুক্তির ঘরোয়া ও কার্যকর উপায়!

ব্রণ শুধু বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা বা মুখের ত্বকেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের মাথার ত্বকেও ব্রণের উপদ্রব দেখা দিতে পারে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘স্ক্যাল্প পিম্পল’। মুখের ব্রণের মতোই, মাথার ত্বকেও সেবাম (তেল), মৃত কোষ বা নোংরা জমে লোমকূপের ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই বাজারচলতি বিভিন্ন প্রসাধনীর ওপর ভরসা করেন, কিন্তু তাতে অনেক সময় হিতে বিপরীত ফল হয়। তাই মাথার ত্বকের এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভরসা রাখতে পারেন কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় এবং সঠিক যত্নের ওপর।

কেন হয় মাথার ত্বকে ব্রণ?

ত্বকের ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে যাওয়াটাই মূল কারণ। যখন অতিরিক্ত তেল, মৃত ত্বকের কোষ বা ময়লা লোমকূপের গোড়ায় জমে যায়, তখন সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ব্রণের আকার নেয়। যারা চুলে অতিরিক্ত প্রসাধনী যেমন জেল, স্প্রে ব্যবহার করেন, বা যারা তৈলাক্ত মাথার ত্বকের অধিকারী, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

‘স্ক্যাল্প পিম্পল’ থেকে মুক্তির কার্যকরী উপায়:

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য: মাথার ত্বক ও চুল পরিষ্কার রাখাটা সবচেয়ে জরুরি। চুলের তেল, ধুলো, ময়লা বা প্রসাধনীর অবশিষ্টাংশ জমে যেন লোমকূপ বন্ধ না হয়। চুলে কোনো কারণে জেল, স্প্রে বা অন্য কোনো স্টাইলিং পণ্য ব্যবহার করলে বাড়ি ফিরে যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

২. সঠিক শ্যাম্পুর ব্যবহার: সালফার ও স্যালিসিলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এই উপাদানগুলো মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টপিকাল রেটিনয়েড এবং বেনজয়িল পেরক্সাইডযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা দ্রুত ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। যদি ফলিকুলাইটিসের সমস্যা হয়, তবে টপিকাল স্টেরয়েড ক্রিম এবং অ্যান্টিহিস্টামিনও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে।

৩. তেল ও তাপের ব্যবহার কমান: চুলে অতিরিক্ত তেল দেওয়া বা চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার (হিট) বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। অতিরিক্ত তাপ এবং তেল লোমকূপের মুখ বন্ধ করে দিতে পারে এবং ব্রণের প্রবণতা বাড়ায়। চুল কৃত্রিমভাবে সোজা করার জন্য ‘স্ট্রেইটনার’ ব্যবহার করলেও একই ধরনের সমস্যা হতে পারে।

৪. কন্ডিশনার ব্যবহারে সতর্কতা: তৈলাক্ত বা তেল-ভিত্তিক কন্ডিশনার ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। অনেক কন্ডিশনারে থাকা তেল মাথার ত্বকের ছিদ্রপথ বন্ধ করে দিতে পারে, যা ব্রণের কারণ হয়। নন-কমেডোজেনিক (লোমকূপ বন্ধ করে না এমন) বা হালকা জেল-ভিত্তিক কন্ডিশনার ব্যবহার করুন এবং খেয়াল রাখুন, কন্ডিশনার যেন শুধু চুলের ডগায় ব্যবহার হয়, মাথার ত্বকে না লাগে।

৫. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণও ত্বকের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রচুর জল পান করুন এবং চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন, যা ত্বকের প্রদাহ বাড়াতে পারে।

মাথার ত্বকের ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে ধৈর্য এবং নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন। যদি সমস্যা গুরুতর হয় বা ঘরোয়া উপায়ে না কমে, তবে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুস্থ মাথার ত্বক মানেই সুস্থ চুল এবং সুস্থ জীবন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy