আধুনিক জীবনে কর্মব্যস্ততা প্রায় সকলের নিত্যসঙ্গী। আর এই নিয়ে সংসারে প্রায়শই ছোটখাটো অশান্তি লেগে থাকে, যা ধীরে ধীরে দাম্পত্য কলহের রূপ নেয়। কর্মব্যস্ত রুটিনে নিজের জন্য সামান্য সময় বের করাই কঠিন, সেখানে প্রিয় সঙ্গীকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া আরও দুরূহ হয়ে পড়ে। হয়তো দু’একটা কথা বলার সুযোগ মেলে, কিন্তু একসাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর মতো সময় কারও হাতেই থাকে না।
এমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়, যখন স্বামী বা স্ত্রী গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন, তখন অন্যজন ঘুমের দেশে। আবার সকালে একজন ওঠার আগেই অন্যজন বেরিয়ে যান কর্মস্থলে। এই পেশা, সংসার এবং অন্যান্য চাপের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে, যা পরবর্তীতে বিচ্ছেদের দিকেও ধাবিত হতে পারে।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে যেমন দীর্ঘ সময় লাগে, ভাঙনের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। অনেক সময় বুঝে ওঠার আগেই সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করে। যখন এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়, ততদিনে তা দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়।
তবে কিছু ছোটখাটো বিষয়ে মনোযোগ দিলে, ব্যস্ততার মধ্যেও অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে আপনার সম্পর্কের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকবে। দাম্পত্য জীবনে স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে যা করণীয়:
১. অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করুন: আপনি কর্মক্ষেত্রে যতই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকুন না কেন, অফিসের কাজ অফিসেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। দিনের শেষে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন শুধু পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। এতে পারিবারিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সম্পর্কও স্বাভাবিক থাকবে।
২. বাড়ি ফিরেই ফেসবুক নয়: বর্তমানে বহু সমস্যার মূলে রয়েছে ফোন বা ইন্টারনেট। এই দুটির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাই বাড়ি ফিরেই হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে স্ক্রল করা অথবা মেসেজ করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. একবেলা একসাথে খান: প্রতিদিন অন্তত একবার স্বামী-স্ত্রী একসাথে খাওয়ার চেষ্টা করুন। যখন একসাথে খাবেন, তখন সঙ্গীর পেশা সম্পর্কে অনাগ্রহ থাকলেও, তার সারাদিন কেমন কেটেছে তা জানার চেষ্টা করুন। নিজের দিনের অভিজ্ঞতাও তার সাথে ভাগ করে নিন। এতে একে অপরের কর্মজগতের সাথে পরিচিত থাকার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে তা বোঝার মানসিকতাও তৈরি হবে।
৪. মাঝেমধ্যে উপহার দিন: যদি এমন হয়, পরপর বেশ কয়েকদিন আপনাদের মধ্যে ঠিকমতো কথা হয়নি, তবে একটি নির্দিষ্ট দিনে দু’জনে অথবা সন্তান থাকলে তিনজনে একসাথে কোথাও ঘুরতে যান, যেখানে একে অপরের সাথে মন খুলে কথা বলা সম্ভব। মাঝে মাঝে সঙ্গীকে অপ্রত্যাশিত উপহার দিন। এটি সম্পর্ককে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে।
৫. সংসারের কাজ ভাগাভাগি করুন: সংসারের ছোট ছোট কাজ একসাথে করার চেষ্টা করুন। এতে যেমন একসাথে সময় কাটানো হবে, তেমনই সংসারের প্রতি দুজনেরই দায়বদ্ধতা তৈরি হবে। সংসারের কাজ একা কারও উপর বর্তায় না, তাই দুজনেরই সমানভাবে ভাগীদার হওয়া উচিত।
৬. রোমান্টিকতার ছোঁয়া: একঘেয়ে জীবনে নতুনত্ব আনতে সঙ্গীকে রোমান্টিক মেসেজ বা ইমোজি পাঠাতে পারেন। এগুলোও সম্পর্কের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৭. পরস্পরকে সম্মান করুন: দাম্পত্য সুখের জন্য একে অপরের পেশাকে সম্মান করা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গীর পেশা আপনার অপছন্দ হতে পারে, কিন্তু দিনের শেষে সেই উপার্জন সংসারের জন্যই আসছে।
৮. ভালোলাগার দিকে খেয়াল রাখুন: দুজনের মধ্যে কোনো সাধারণ শখ থাকলে, যেমন বই পড়া, একে অপরকে নতুন বইয়ের সন্ধান দিন। সবসময় সঙ্গীর ভালোলাগার প্রতি খেয়াল রাখুন। মনে রাখবেন, ব্যস্ততার মধ্যে জীবনসঙ্গীকে ‘সময়’-এর চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই দেওয়া যায় না। তাই তার প্রতি একটু বিশেষ মনোযোগ এবং এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।