লেবু জলের ভিতরে উপস্থিত ফাইবার এবং আরও সব উপকারি উপাদান একদিকে যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা যাতে বৃদ্ধি না পায়, সে দিকে খেয়াল রাখে, তেমনি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়। সেই সঙ্গে রক্তচাপ যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে দিকেও নজর রাখে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওযার আশঙ্কা যায় কমে। তবে এ কথা ভেবে নিলে ভুল হবে যে নিয়মিত লেবু জল খাওয়া শুরু করলে কেবল এই সব উপকারই পাওয়া যায়। কারণ এই পানীয়টির ভিতরে উপস্থিত ভিটামিন সি, ফলেট এবং পটাশিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে আরও একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন-

মানসিক অবসাদের খপ্পর খেতে মুক্তি মেলে

একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত লেবুর জল খেলে স্ট্রেস একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে অবসাদের প্রকোপও কমে। আসলে লেবু জলে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে এমন সব সমস্যা নিমেষে কমে যেতে শুরু করে।

মুখ গহ্বর সংক্রান্ত নানা রোগ নিমেষে সেরে যায়

মুখ থেকে খুব দুর্গন্ধ বেরয়? এদিকে নানা কিছু করেও সুরাহা মিলছে না? তাহলে আজ থেকেই লেবু পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বদ গন্ধ একেবারে কমে যাবে। শুধু তাই নয়, মাড়ি থেকে রক্ত পাত এবং দাঁতে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যা হলেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে কাজে লাগাতে পারেন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়

হাজারো বিউটি প্রডাক্ট যা করে উঠতে পারেনি, তা লেবুর জল নিমেষে করে ফলতে পারে। আসলে এই পানীয়তে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে ত্বকের বয়স কমানোর পাশাপাশি ব্ল্যাক হেডস এবং বলিরেখা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, গরমকালে ত্বককে ঠাণ্ডা এবং ঘামমুক্ত রাখতে লেবুর জল দিয়ে বারে বারে মুখটা ধুতে পারেন, দেখবেন উপকার পাবেন।

ফুসফুস সংক্রান্ত নানা রোগের প্রকোপ কমে যায়

যারা অ্যাস্থেমা বা কোনও ধরনের রেসপিরেটরি প্রবলেমে ভুগছেন তারা যত শীঘ্র সম্ভব রোজের ডায়েটে লেবুর জলকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন কেমন ফল পান! আসলে এই পানীয়টি শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত একাধির জটিলতাকে কমিয়ে ফেলতে দারুন কাজে আসে।

লিভার চাঙ্গা হয়ে ওঠে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লেবু জল খেলে লিভারে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। ফলে লিভারের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে

নিয়মিত লেবু জল খেলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্তি মেদ ঝরে যেতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ লেবুর ভিতরে উপস্থিত পেকটিন নামক একটি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। আর যেমনটা আপনাদের সবারই জানা আছে যে কম মাত্রায় খাবার খেলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কম মাত্রায় ক্য়ালরির প্রবেশ ঘটে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না।

দেহের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়

লেবু জলের ভিতরে যে কেবল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত থাকে, তা নয়, সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও কত কী, যা দেহের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে শরীরকে শক্তপোক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

যারা বদ হজম, কনস্টিপেশন, বারংবার পেট খারাপসহ নানাবিধ পেটের রোগে ভুগে থাকেন তারা প্রতিদিন সকালে গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে স্টমাক অ্যাসিডের ক্ষরণ ঠিক মতো হতে শুরু করবে। ফলে রোগের প্রকোপ তো কমবেই, সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনও বেরিয়ে যাবে।

পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে

ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু জল খেলে দেহের ভিতরে পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন লেবু জল খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এত মাত্রায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

এনার্জির ঘাটতি দূর হয়

ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি না খেয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস করে লেবুর জল খাওয়ার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে দেখবেন শরীর চনমনে হয়ে উঠতে সময়ই লাগবে না। আসলে লেবুর ভিতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে সকাল সকাল শরীর এবং মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগে না।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে

লেবু জলে থাকে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এমন রোগে যারা বহু দিন ধরে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকাল-বিকাল লেবু জল খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন দারুন ফল পাবেন। তবে এমনটা করার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন