রান্নার স্বাদ বাড়াতে এলাচের ব্যবহার বহুল প্রচলিত, কিন্তু এই ছোট্ট মশলাটির যে কত নিরাময় গুণ রয়েছে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ফাইবার, নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, থিয়ামিন, ইলেকট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, সি সহ অসংখ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর এলাচ আপনার শরীর স্বাস্থ্যকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে পারে। এক সর্বভারতীয় স্বাস্থ্য ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এলাচের ১৮টি জাদুকরী উপকারিতা এখানে তুলে ধরা হলো:

১. হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা: এলাচে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
২. শ্বাসকষ্টে আরাম: সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা এবং রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচ কার্যকর। ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসপ্রশ্বাসের যেকোনো সমস্যায় এলাচ সেবন উপকারী।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় এলাচ ওষুধের মতো কাজ করে। স্যুপ বা স্টু-এর সঙ্গে এলাচ মিশিয়ে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে।
৪. বিষণ্ণতা দূরীকরণ: মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে এলাচ দারুণ সাহায্য করে। প্রতিদিন চায়ের সঙ্গে কয়েক দানা এলাচ ফুটিয়ে পান করা মানসিক শান্তি বয়ে আনে।
৫. হজমশক্তির উন্নতি: এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান বিপাকের ব্যাধি থেকে শরীরকে মুক্তি দেয়। যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের উন্নতি ঘটিয়ে হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, ফলে বুকে জ্বালা, পেট খারাপ এবং অম্বলের মতো সমস্যা থেকেও অনায়াসে রেহাই পাওয়া যায়।
৬. শরীর ডিটক্সিফিকেশন: এলাচে থাকা ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার ও সতেজ রাখে। এটি শরীরকে বাইরে থেকে আসা যেকোনো বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি দেয় ও ডিটক্সিফাই করে।
৭. হেঁচকির নিরাময়: শরীরের যেকোনো মাংসপেশিকে শান্ত করতে এলাচের উপকারিতা অনেক। হেঁচকির সমস্যা হলে এক কাপ গরম জলে এক চা চামচ এলাচ মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধীরে ধীরে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
৮. ক্ষুধা বৃদ্ধি: এলাচ ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। এলাচের তেল ব্যবহার করলে খাওয়ার প্রতি ইচ্ছে বাড়ে ও ক্ষুধাও বৃদ্ধি পায়।
৯. দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য: এলাচের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মাড়ি ও দাঁতের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর ঝাঁঝালো স্বাদ নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে মুখকে তরতাজা রাখে।
১০. ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই: এলাচের পুষ্টিগুণ অনেক ধরনের ক্যান্সারের টিউমার বা কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করতে পারে। বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এলাচের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
১১. স্মৃতিশক্তি প্রখর করে: এলাচে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে শান্ত করে ও স্মৃতিশক্তি প্রখর করে তুলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুধের সঙ্গে দুটি এলাচ ফুটিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।
১২. যৌন স্বাস্থ্য বৃদ্ধি: এলাচের খাদ্য উপাদান স্নায়ুকে শান্ত করে এবং যৌন ইচ্ছাকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া, বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতেও এলাচ সাহায্য করে।
১৩. উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ফর্সাভাবের জন্য এলাচ দারুণ কাজ করে। এটি ত্বকের ব্রণ ও কালচে ভাব দূর করে। মধু ও এলাচের প্যাক মুখে লাগিয়ে উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া যেতে পারে।
১৪. ত্বকের অ্যালার্জিতে উপশম: এলাচ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি খুব ভালো অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বককে মোলায়েম ও ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। মধু এবং কালো এলাচের মিশ্রণ অ্যালার্জি আক্রান্ত অংশে লাগালে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
১৫. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: এলাচে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
১৬. ঠোঁটের যত্নে: এলাচ দিয়ে তৈরি বাম, গ্লস বা তেল ঠোঁটকে কোমল ও গোলাপি রাখে। এলাচের গুঁড়ো, অলিভ বা আমন্ড অয়েল এবং সামান্য অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ঘরেও প্যাক তৈরি করে ঠোঁটে লাগানো যায়।
১৭. চুলের বৃদ্ধি: মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকলে চুলের গোড়া মজবুত হয় ও চুল পড়া কমে। এলাচের পুষ্টিকর উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে ঝলমলে ও লম্বা করতে সাহায্য করে।
১৮. মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে এলাচ মাথার ত্বক ভালো রাখে। এলাচ চুলের ফলিকলগুলিকে মজবুত করে। এলাচ ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুলে বা এলাচের গুঁড়ো চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করলে মাথার ত্বকের সংক্রমণ দ্রুত সেরে ওঠে।
এইভাবে, রান্নাঘরের একটি সাধারণ মশলা এলাচ আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য এক অসাধারণ ঔষধ হিসেবে কাজ করতে পারে।