পর্তুগালের গবেষক অ্যাডাম হালমানের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য – যে মহিলারা বেশি খেতে ভালোবাসেন এবং যাদের শরীর স্থূলকায়, তারা তাদের স্বামীর ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে স্ত্রীর ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্বামীর মোটা হওয়া বা না হওয়ার তেমন কোনো প্রভাব গবেষণায় দেখা যায়নি।
গবেষণায় এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশিরভাগ পুরুষ যারা বেশি খেতে পছন্দ করেন বা খাবারের প্রতি যাদের বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে, তারা সাধারণত তাদের স্ত্রীদেরকে স্লিম দেখতেই পছন্দ করেন।
গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, মাঝবয়সী মহিলাদের মধ্যে যারা তুলনামূলকভাবে বেশি মোটা, তারাই অল্প বয়সী স্ত্রীদের তুলনায় তাদের স্বামীর ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশি ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে, স্লিম বা হালকা গড়নের মহিলাদের স্বামীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তুলনামূলকভাবে কম।
এই ফলাফলের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে গবেষকরা মনে করছেন, যে মহিলারা মোটা, তারা তাদের স্বামীদের চেহারার গড়ন নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। বরং কোনো না কোনোভাবে তারা স্বামীদের বেশি খেতে উৎসাহিত করেন। তাছাড়া, রান্নার বিষয়টি সাধারণত নারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায়, তাদের পছন্দের খাবার-দাবার দ্বারাই তাদের স্বামীরা প্রভাবিত হন। এর ফলে তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে এবং ডায়াবেটিসের প্রবণতা বাড়ে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম করার প্রবণতার উপর পুরুষদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। তবে এই দুটি বিষয়ে স্ত্রীদের উপর পুরুষদের প্রভাব সামান্য। কিন্তু স্বামীদের উপর স্ত্রীদের প্রভাব বেশ ব্যাপক। তাই পুরুষের স্বাস্থ্য অনেকাংশে স্ত্রীদের তৎপরতার উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও, মোটা স্ত্রীরা অনেক সময় তাদের স্বামীদের চেহারা নিজেদের সাথে মানানসই করার জন্য সচেতন থাকেন এবং সেক্ষেত্রে তারা ইচ্ছে করেই স্বামীদের খাওয়ার প্রতি বেশি যত্নশীল হন।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক আরহুস ইউনিভার্সিটির অ্যাডাম হালমান জানান, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক প্রভাবের উপর বিশ্বে এটাই প্রথম গবেষণা। পর্তুগালে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান এসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব ডায়াবেটিসের বার্ষিক আলোচনা সভায় এই গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষণা স্বামী-স্ত্রীর স্বাস্থ্য এবং তাদের পারস্পরিক প্রভাবের একটি নতুন দিক উন্মোচন করলো।