বর্তমানের দ্রুত ও অস্থির জীবনযাপনের কারণে অবসাদ বা ক্লান্তি এখন যেন এক নিত্যদিনের সঙ্গী। অনেক পুরুষই সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করেন, যার পরিচিতি দাঁড়িয়েছে ‘টিএটিটি’ বা ‘টায়ার্ড অল দ্য টাইম’ (Tired All The Time) নামে। এই ক্লান্তি কেবল মানসিক নয়, এর পেছনে থাকতে পারে কিছু শারীরিক কারণও। আসুন, জেনে নিই পুরুষদের সব সময় ক্লান্ত থাকার ৫টি প্রধান কারণ:
১. নিদ্রাহীনতা (Sleep Apnea)
ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটার কারণে নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, যাকে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়। নাক ডাকার উপসর্গ দেখে এই সমস্যাটি ধরা যায়। স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে মস্তিষ্ক জেগে থাকে, ফলে ঘুম গভীর হয় না এবং সারা দিন ক্লান্তি শরীরে থেকে যায়। চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা করিয়ে নিদ্রাহীনতা নির্ণয় করা যায়। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে এ সমস্যা দূর হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ, ওজন কমানো, মদ্যপান পরিহার এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এই সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত উপকারী।
২. টেস্টোস্টেরন কম (Low Testosterone)
টেস্টোস্টেরন পুরুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা শুক্রাশয়ে তৈরি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে পারে। টেস্টোস্টেরন কমে গেলে ক্লান্তি বা অবসাদসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। ঘুমের মধ্যে অধিক টেস্টোস্টেরন তৈরি হয়, তাই অবসাদ কাটাতে এবং টেস্টোস্টেরন তৈরিতে পর্যাপ্ত ঘুম খুব দরকার। সুষম খাবারও এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল, সবজি এবং কম মাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী।
৩. রক্তাল্পতা (Anemia)
রক্তে লোহিত কণিকা কমে গেলে রক্তাল্পতা হয়, যা থেকে অবসাদ ভাব তৈরি হতে পারে। যদি সব সময় ক্লান্ত লাগে, দুর্বল বোধ হয়, ঘুম ও মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়, বুক ও মাথাব্যথা হয়, তবে রক্তাল্পতার কারণে এমনটি হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। শরীরে লৌহের ঘাটতি হলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লৌহের ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
৪. থাইরয়েড সমস্যা (Thyroid Problems)
গলার ওপর প্রজাপতি আকৃতির থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কত দ্রুত ক্যালরি পোড়ানো হবে বা কত দ্রুত হৃৎস্পন্দন হবে, এই বিষয়গুলোও থাইরয়েড হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বা হাইপোথাইরয়েডিজম হলে অবসাদ তৈরি হয়। সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় থাইরয়েডের সমস্যা ধরা পড়ে এবং এটি চিকিৎসায় সহজে সারে। যারা অবসাদ বা মাংসপেশির দুর্বলতায় ভোগেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
পুরুষদের এই ধরনের ক্লান্তি অনুভব হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।