বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণে। এই মৃত্যুর প্রতি ৫টির মধ্যে অন্তত ৪টির জন্যই দায়ী হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক। হার্ট অ্যাটাককে প্রায়শই ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, যা যেকোনো বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে ৫০ বা তার বেশি বয়সীদের। তবে, বর্তমানের অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে অল্পবয়সীদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
কীভাবে ঘটে হার্ট অ্যাটাক?
হার্ট অ্যাটাক মূলত হৃৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেনের অভাবকে বোঝায়। যখন কোনো ধমনী হৃৎপিণ্ডে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে চর্বিযুক্ত বা কোলেস্টেরল-ধারণকারী পদার্থ জমা হওয়ার কারণে এটি ঘটতে পারে। এই চর্বিযুক্ত জমা বা ফলক ফেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধে, যা ধমনীগুলোকে ব্লক করে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয়। এর ফলেই হার্ট অ্যাটাক হয়।
নারী ও পুরুষের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কি ভিন্ন?
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে। যদিও বুকে ব্যথা ও চাপ উভয় লিঙ্গের মধ্যেই একটি সাধারণ লক্ষণ।
নারীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব, ঘাম, বমি, ঘাড়, চোয়াল, গলা, পেট বা পিঠে ব্যথাসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
অন্যদিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, চোয়াল ও কাঁধে ব্যথাসহ বমি বমি ভাব হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুরুষদের বড় ধমনীতে প্লেক তৈরির ঝুঁকি বেশি, যা হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ করে। অন্যদিকে নারীদের হৃৎপিণ্ডের ধমনী ছোট হওয়ায় সেখানেও প্লেক জমার প্রবণতা বেশি, যা নারী ও পুরুষের লক্ষণের গতিপথ পরিবর্তন করে।
হার্ট অ্যাটাকের আগে নারীদের মধ্যে যে লক্ষণ দেখা যায়
সার্কুলেশন জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে যাওয়া ৫০০ জনেরও বেশি নারীর দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ নারীই হার্ট অ্যাটাকের অন্তত এক মাস আগে থেকে অস্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। এর মধ্যে প্রধান লক্ষণগুলি হলো:
ক্লান্তি
অনিদ্রা
শ্বাসকষ্ট
এছাড়াও, অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে থাকতে পারে:
বুকে অস্বস্তি বা ব্যথা
শরীরের উপরের অংশে ব্যথা ও অস্বস্তি (যেমন: এক বা উভয় বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা পেট)
বমি বমি ভাব
ঠান্ডা ঘাম
মাথা ব্যথা
এই লক্ষণগুলো সাধারণ মনে হলেও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ) সবাইকে এই লক্ষণগুলো অবহেলা না করার বিষয়ে সতর্ক করেছে। উপরে উল্লিখিত যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আপনার বা আপনার পরিচিত কারও মধ্যে এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে, দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। জীবন বাঁচানোর জন্য সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।