রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আয়োজনের কথা আসলেই মাথায় যে চিত্রটি ভেসে ওঠে তা হলো: একটি শান্ত কক্ষ, আরামদায়ক বিছানা এবং প্রচুর সময়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের বেলায় আমরা যা করি সেসব কর্মকাণ্ড রাতের কর্মকাণ্ডের তুলনায় আমাদের ঘুমের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি নির্ধারক ভুমিকা পালন করে।
সুতরাং আপনার যদি রাতের ঘুমের গুনগত মানে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে আপনি দিনের বেলায় এই ভুলগুলো করছেন কিনা তা দেখে নিন….
১. আপনি স্নুজ বাটন চাপেন
সকালে আপনি প্রথমে যে কাজটি করেন সেটিই আপনার রাতের ঘুমের গুনগত মান নষ্ট করতে পারে। কারণ আপনি যখন ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজার পর স্নুজ বাটন চেপে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়েন সেই ঘুম ১০ মিনিটে শেষ হওয়ার নয়। অথচ ১০ মিনিট পর পুনরায় অ্যালার্মটি বেজে উঠবে।
ফলে আপনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে কিছুটা অতিরিক্ত ঘুম ঘুমাচ্ছেন। আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে ঘুমানো ঘুমের গুনগত মানও থাকে কম।
আপনার দেহ যদি নতুন করে শুরু করা একটি ঘুমের চক্র সম্পন্ন করতে না পারে তাতে দিনের বেলায় ঝিমুনি আসতে পারে। যা আপনার দেহের আভন্তরীণ দেহঘড়িতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরের রাতেও আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
২. আপনি রোদ থেকে দূরে থাকেন
রাতে ভালো ঘুমের জন্য সকাল বেলা সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করতে পারেন তা হলো রোদে বেড়ানো। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সকাল সকাল গায়ে সূর্যের আলো মাখলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য আপনার দেহঘড়ির ছন্দ ঠিক থাকবে। আপনার দেহঘড়িই আপনাকে বলে দিবে সকালে কখন ঘুম থেকে জাগতে হবে বা রাতে কখন ঘুমাতে যেতে হবে।
৩. স্মার্টফোনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটালে তা আপনার ঘুমের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। স্মার্টফোন ডিভাইস থেকে বের হওয়া ব্লু লাইট বা নীল আলো আপনার দেহে রাতের বেলা প্রাকৃতিকভাবে যে মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন হয় তাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই হরমোনই আপনার মধ্যে ঘুমের অনুভূতি সৃষ্টি করতে প্রধান ভুমিকাটি পালন করে।
কিন্তু নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ঘুমাতে যাওয়ার আগে নয় বরং দিনের যে কোনো সময়েই যদি আপনি স্মার্টফোনে বেশি সময় ব্যয় করেন তা আপনার রাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে। গবেষণায় ৬৫৩ জন লোকের স্মার্টফোন ব্যবহারের অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায় স্মার্টফোনে সময় ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের গুনগত মান এবং সময়ও কমে আসে।
৪. আপনি একটি বা দুটি সোডা পান করেন
নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতের বেলায় ৫ ঘন্টা বা আরো কম সময় ঘুমান তারা যারা ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান তাদের তুলনায় চিনি ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ২১% বেশি পান করেন। এই গবেষণায় অংশ নেন ১৮,৭৭৯ জন।
তবে এতে প্রমাণিত হয়নি কম ঘুমের কারণে লোকে ওই পানীয়গুলো বেশি পান করছেন নাকি ও পানীয়গুলো বেশি পান করার কারণে তাদের কম ঘুম হচ্ছে। তবে দুটি আচরণের ফলেই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দুটি আচরণের ফলেই হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়।
তবে সোডা এবং এনার্জি ড্রিঙ্কস পান করার পরিমাণ কমিয়ে আনলে ঘুমের গুনগত মানে উন্নতি ঘটবে।
৫. আপনি ধুমপান করেন
ধুমপানের স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর তালিকায় ঘুমের সমস্যাটিকেও যুক্ত করুন। সিগারেটের তামাকে থাকা নিকোটিন একটি উত্তেজক উপাদান। যা আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অধুমপায়ীদের চেয়ে ধুমপায়ীরা চারগুন বেশি ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। ধুমপানের মাধ্যমে আসলে দেহের আভ্যন্তরীন দেহঘড়িটি বদলে যায়। ফলে নিদ্রহীনতা দেখা দেয়। এমনকি প্রতিটি সিগারেট পানে গড়ে ১.২ মিনিট করে ঘুম নষ্ট হয়।
৬. আরাম কেদারায় বসে প্রচুর সময় ব্যয় করেন
ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য উপহার স্বরুপ। যার উপকারিতার কোনো শেষ নেই। ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, মেজাজ-মর্জি ভালো রাখে, হাড় ও মাংসপেশি শক্তিশালি করে, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা এবং বেশ কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এবং এতে আয়ুও বাড়ে। আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনি শিশুর মতো ঘুমাতে পারবেন।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, দিনে গড়ে ছয় ঘন্টার কম বসে থাকলে রাতে ভালো ঘুম হয়। এর বেশি সময় ধরে বসে থাকলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
৭. বিছানায় বসে নাস্তা করা বা অফিসের কাজ করা
আপনার বাসাটি যতই ছোট হোক না কেন আপনার বিছানাটি কোনো ডেস্ক নয়। এটি আপনার আরামকেদারাও নয়। আর অবশ্যই এতে শুয়ে বসে বন্ধুদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনালাপ করাও ঠিক নয়।
ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপনার বিছানাটি শুধু ঘুম আর যৌন মিলনের জন্যই বরাদ্দ রাখুন। তাহলেই শুধু বিছানার সঙ্গে ঘুমের একটি শক্তিশালি সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এতে আপনার দেহ এই প্রশিক্ষণ পাবে যে আপনি যখন বিছানায় যাচ্ছেন তখন শুধু ঘুমাতে হবে।bs